গর্ভকালীন বা মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার নিয়ম ২০২৪।

মাতৃত্বকালীন বা গর্ভকালীন ভাতা পাওয়ার নিয়ম মেনে আবেদন করলে ভাতা পাওয়া যায়। কি কি শর্ত রয়েছে যদি আপনি না জেনে থাকেন আশা করি পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়লে জেনে যাবেন। মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার উপায়, অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম ও টাকার পরিমাণ এসব নিয়ে বিস্তারিত থাকছে।

আমাদের দেশে গর্ভকালীন জটিলতার একটি কারণ হলো দারিদ্রতা। দারিদ্রতার কারণে মাতৃত্বকালীন বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষ করে অপুষ্টি ও সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে অনেক মা ও শিশুর অকাল মৃত্যু ঘটে। একটি স্বল্প আয়ের পরিবারে মাতৃত্বকালীন নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ২০১১ সাল থেকে সরকারি ভাবে চালু করা হয় ভাতার ব্যবস্থা।

মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য কি প্রয়োজন?

গর্ভকালীন বা মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার নিয়ম

শুধুমাত্র প্রথম বা দ্বিতীয় গর্ভাবস্থার জন্য এই ভাতা প্রযোজ্য। ৩য় সন্তান গর্ভধারণে এই ভাতা পাওয়া যাবে না। একটি আবেদন ফরম পূরণ করে ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে জমা দিতে হবে। সাথে লাগবে পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও গর্ভাবস্থার মেডিকেল রিপোর্ট। ফরমটি ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে নির্ভুলভাবে পূরণ করতে হবে। আপনার আবেদন অনুমোদন করা হলে এই ভাতা পাবেন।

তবে মনে রাখবেন আপনার মাসিক আয় ১৫০০ থেকে ২০০০ এর বেশি হলে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আবেদন বাতিল করে দিতে পারে। একমাত্র বাংলাদেশের নাগরিকরা আবেদন করতে পারবে তাই আবেদন করার সময় ভোটার আইডি কার্ড বা এনআইডি কার্ড লাগবে।

আপনার যদি নিজস্ব বা পরিবারের কারো চাষের জমি বা মাছ চাষের পুকুর থাকে এবং আয়ের উৎস থাকে তাহলে আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ এই ভাতা শুধু দরিদ্র মায়েদের জন্য। একবার ভাতা পাওয়ার সুযোগ থাকলেও দুই বছর মধ্যে প্রথম সন্তান মারা গেলে পুনরায় আবেদন করা যাবে।

মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদনের শর্তাবলী

আবেদনকারীকে অবশ্যই নিচের শর্তগুলো মেনে আবেদন করতে হবে।

  • গর্ভবতী হতে হবে।
  • প্রতিবন্ধী দরিদ্র মায়েদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। আবেদনকারী মায়ের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সের মধ্যবর্তী হতে হবে।
  • চাষ করার জন্য জমি এবং মাছ চাষ করার জন্য পুকুর নেই।
  • ভাড়া বা অন্যের বাড়িতে বসবাস করে অথবা শুধুমাত্র বসতবাড়ি রয়েছে কেবল এমন মায়েরা আবেদন করতে পারবে।
  • পরিবারের মাসিক আয় ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা বা তার চেয়ে কম।

মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইন আবেদনের নিয়ম

আপনি যদি ঘরে বসে অনলাইনে আবেদন করতে চান তাহলে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে। সেখানে যে তথ্যগুলো দিতে বলবে সেগুলো সঠিকভাবে দিতে হবে। এখানে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি স্টেপ বাই স্টেপ দেখানো হয়েছে।

১ম ধাপ: আবেদনকারী মায়ের ব্যক্তিগত তথ্য

প্রথমে আপনাকে নিচের লিংকটি ওপেন করতে হবে। http://103.48.16.6:8080/LM-MIS/applicant/onlineRegistration
এখানে ক্লিক করার পর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি ওয়েব পেজ ওপেন হবে। পেজটিতে একটি ফরম থাকবে যা আপনাকে পূরণ করতে হবে। আবেদনকারী মায়ের ব্যক্তিগত তথ্য সঠিকভাবে বসাতে হবে।

আরো পড়ুন

প্রথমে সিলেক্ট করতে হবে আপনার আবেদনের অর্থবছর। এরপর জাতীয় পরিচয় পত্র বা এনআইডি কার্ডের নম্বর দিয়ে দিন। গর্ভবতী মায়ের জন্মতারিখ সঠিকভাবে দিন এবং নাম একবার বাংলায় আর একবার ইংরেজিতে লিখুন। এবার পিতার নাম, মাতার নাম ও স্বামীর নাম লিখুন।

আবেদনকারী মায়ের ব্যক্তিগত তথ্য

এবার ব্যাচ নং বেছে নিন অপশন থেকে চলমান অর্থবছর দিতে হবে। ডাকনাম বা যে নামে পরিচিত তা লিখে এক এক করে জন্মস্থান, ধর্ম, মোবাইল নং, শিক্ষাগত যোগ্যতা, রক্তের গ্রুপ, বৈবাহিক তথ্য দিয়ে এন আর বি ? অপশনে টিক মার্ক দিতে হবে যদি প্রবাসী বাংলাদেশী হয়। এই ধাপের শেষ পর্যায়ে অন্য কর্মসূচির ভাতাভোগী কি? এই অপশন রয়েছে। আপনি সরকারি অন্য ভাতা ভোগ করলে টিক দিয়ে দিন।

২য় ধাপ: বর্তমান ঠিকানা

এই ধাপে আপনার বর্তমান ঠিকানা দিতে হবে। অর্থাৎ আপনি যে স্থানে বর্তমানে বসবাস করছেন।বাড়ি ও গ্রাম, বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং পোস্ট কোড অবশ্যই সঠিকভাবে লিখতে হবে।

আবেদনকারী মায়ের বর্তমান ঠিকানা

৩য় ধাপ: স্থায়ী ঠিকানা

বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা এক হলে একই অপশনে ক্লিক করুন। আর ভিন্ন হলে নতুন করে স্থায়ী ঠিকানা লিখুন।

৪র্থ ধাপ: আর্থ-সামাজিক তথ্য

এই ধাপে আবেদনকারীর প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক তথ্য গুলো দিতে হবে। পরিবারের প্রথম রোজগারী মহিলা হলে হ্যাঁ সিলেক্ট করুন আর তা না হলে না অপশন সিলেক্ট করুন। মাসিক আয় ২০০০ টাকা বা তার কম দিতে হবে। গর্ভবতী প্রতিবন্ধী কিনা, বাসস্থান এবং কৃষি জমি/পুকুর আছে কিনা এগুলো ফিলাপ করে দিন।

জাতীয় পরিচয় পত্র অনুসারে বয়স দেয়ার পর গর্ভধারণ ক্রম বাছাই করুন। গর্ভধারণ ক্রম এই অপশনে প্রথম গর্ভধারণ ও দ্বিতীয় গর্ভধারণ দেওয়া থাকে।

৫ম ধাপ: পেমেন্টের তথ্য

পেমেন্টের ধরন কি হবে অর্থাৎ টাকা কিভাবে পেতে চান তা সিলেক্ট করতে হবে এই পর্যায়ে। টাকা যদি ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে পেতে চান তাহলে ব্যাংকিং অপশন সিলেক্ট করতে হবে। তারপর ব্যাংকের নাম, শাখা,হিসাবের ধরণ, হিসাবের নাম ও হিসাব নং নির্ভুল ভাবে লিখুন।

পেমেন্টের ধরন মোবাইল ব্যাংকিং হলে তার নাম যেমন: বিকাশ, রকেট, নগদ, শিওর ক্যাশ ইত্যাদি আপনার সুবিধামত সিলেক্ট করুন।

৬ষ্ঠ ধাপ: ছবি ও স্বাক্ষর

সব শেষ ধাপে আপনার একটি ছবি এবং স্বাক্ষর বা টিপসই আপলোড করতে হবে। একটি স্বচ্ছ ছবি তুলে রাখুন এবং একটি কাগজে স্বাক্ষর বা টিপসই দিয়ে ছবি তুলে রাখুন। আপলোড আইকনে ক্লিক করে ছবি বাছাই করার পর সংরক্ষণ করুন বাটনে ক্লিক করলেই কাজ শেষ।

আবেদনকারী মায়ের ছবি আপলোড

আপনার আবেদনটি যাচাই করে পরে মোবাইলের মাধ্যমে জানানো হবে।

মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদন ফরম

আপনি যদি অফলাইনে আবেদন করতে চান তাহলে আপনার একটি আবেদন ফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদে মঞ্জুরীর আবেদনপত্র বা ফরম পাওয়া যায়। ফরম পূরণ করে সেখানে জমা দিতে হবে।

অনলাইন বা অফলাইন উভয় ক্ষেত্রে আবেদন সাবমিট করার আগে ভালো করে দেখে নিবেন কোন তথ্যে ভুল আছে কিনা। কোন তথ্য ভুল হলে জেলা শিশু ও মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ে গিয়ে কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানাতে হবে। তিনি আপনার ভুল তথ্য সংশোধন করে দিবেন।

মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা?

এই ভাতা প্রতিমাসে ৮০০ টাকা করে দেওয়া হয়। টাকা প্রদান করা হয় প্রতি ছয় মাস পর পর। ৬ মাসে ৪,৮০০ টাকা করে ৩ বছরে মোট ২৮,৮০০ টাকা দেয়া হয়।

আমাদের শেষ কথা

এই ভাতা দরিদ্র মায়েদের জন্য একটি ভালো পদক্ষেপ। কিভাবে টাকাটা পাওয়া যায় এবং নীতিমালা সম্পর্কে এখানে জানানো হয়েছে। প্রক্রিয়াটি না জানার কারণে অনেকেই প্রতারণার স্বীকার হয়।

এই পোস্ট সম্পর্কে আপনাদের মতামত জানাতে পারেন। বুঝতে কোন অসুবিধা হলে আমাদের জানাতে পারেন।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *