সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে প্রতিদিন পরিমাণ মতো ক্যালরি গ্রহণ করা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ক্যালরি আমাদের শরীরে শক্তির যোগান দেয়। আর এই শক্তি আমাদের কার্যক্ষম করে তোলে। ক্যালরি মানেই ওজন বৃদ্ধি এ কথাটা ঠিক নয়। প্রয়োজনের চেয়ে কম ক্যালরি গ্রহণে দেখা দিতে পারেন নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা।
যদি ক্রমাগত প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ক্যালরি গ্রহণ করা হয় তাহলে শারীরিক ওজন
বেড়ে যায় যেমন ঠিক। তেমনি ক্রমাগত প্রয়োজনের চেয়ে কম ক্যালরি গ্রহণের ফলে
শরীরের ওজন কমে, স্বাস্থ্য দুর্বল ও রোগা পাতলা হয় এইটাও ঠিক। তাই স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে বা সুস্থ থাকতে হলে পরিমাণমতো ক্যালোরি গ্রহণ করতে হবে।
সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন ১,৬০০ থেকে ৩০০০ ক্যালোরির প্রয়োজন হয়। তবে জেন্ডার, বয়স, উচ্চতা, শারীরিক ওজন ইত্যাদি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে দৈনিক প্রয়োজনীয় ক্যালরির পরিমাণ কম বেশি হতে পারে।
ওজন ও ক্যালোরির মধ্যে সম্পর্ক
ক্যালরির সাথে ওজনের সম্পর্ক রয়েছে যা আমরা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি। তাই প্রথমে জানতে হবে বয়স, উচ্চতা ও জেন্ডার অনুযায়ী শরীরের ওজন কতটুকু থাকা উচিত। আদর্শ ওজন জানার বেশ কিছু পদ্ধতি আছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো বডি মাস ইনডেক্স বা বিএমআই। শুধু শরীরের ওজন ও উচ্চতা জানা থাকলে খুব সহজেই এই পদ্ধতিতে আদর্শ ওজন বের করা যায়। নিচে বিএমআই ফলাফল ও নির্দেশনা দেয়া হলো।
বিএমআই | নির্দেশনা |
১৮.৫ এর কম | কম ওজন |
১৮.৫ থেকে ২৪.৯ | স্বাভাবিক ওজন |
২৫ থেকে ২৯.৯ | ওজনাধিক্য |
৩০ বা তার উপরে | অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা |
দেহের মোট ওজনকে উচ্চতার বর্গ ফল দিয়ে ভাগ করলে বিএমআই ফলাফল পাওয়া যায়। অর্থাৎ বিএমআই ফলাফল= কেজি মোট ওজন ÷ মিটারে (উচ্চতা× উচ্চতা)। তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যেমন: একই উচ্চতা ও ওজনের একজন মেদ ভুঁড়ি ওয়ালা ও একজন অ্যাথলেটিক এর বিএমআই ফলাফল সমান হবে। একজন অ্যাথলেটিক নিশ্চয়ই তার সমান উচ্চতা ও ওজনের ভুঁড়ি ওয়ালা কোন ব্যক্তি থেকে ফিটনেস এর দিক দিয়ে এগিয়ে থাকবে।
ভিসেরাল ফ্যাট বা মেদ ভুঁড়ি ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই কারো মেদ ভুঁড়ি থাকলে তা কমানোর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। ক্যালরি গ্রহণ লিমিটেড করে এবং অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ণ করে সাথে আরো কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলে মেদ ভুঁড়ি কমানো যায়।
আরও পড়ুন স্থায়ী মোটা হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ টিপস।
গবেষকদের মতে যাদের কোমরের পরিধি দেহের উচ্চতার অর্ধেকের চেয়ে কম তাদের ফিটনেস
মোটামুটি ভালো। এসকল ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, স্ট্রোক এবং স্থূলতার সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য রোগের সম্ভাবনা খুব কম থাকে।
ক্যালরি বার্ণ বা খরচের হিসাব
বিএমআই ফলাফল জানার পর প্রতিদিন কতটুকু ক্যালরি খরচ করছেন সে বিষয়ে জানতে হবে আমাদের সক্রিয় থাকতে শক্তি বা ক্যালরির প্রয়োজন। আমরা দৈনিক যে ক্যালরি নিচ্ছি
তার ২০ শতাংশ মস্তিষ্কের বিপাকক্রিয়ায় ব্যায় হয়। বাকি ক্যালরির বেশিরভাগ ব্যয় হয় বেসাল মেটাবলিজমে। ঘুমিয়ে থাকলে হজম ক্রিয়া, শ্বাস-প্রশ্বাস, রক্তচলাচল ও দেহের অভ্যন্তরের অঙ্গ সমূহের ক্রিয়াকলাপ চলতে থাকে। তাই ঘুমন্ত অবস্থায়ও কিছুটা ক্যালরি ব্যয় হয়।
উষ্ণ আবহাওয়ায় শরীরের জন্য যতটুকু ক্যালরি প্রয়োজন তার চাইতে বেশি প্রয়োজন ঠান্ডা আবহাওয়ায়। ঠান্ডা আবহাওয়ায় দেহের তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য অতিরিক্ত ক্যালরি খরচ হয়। প্রতিদিন কতটুকু ক্যালরি নিতে হবে তা আবহাওয়ার উপর অনেকটা নির্ভর করে।
ওজন অনুযায়ী ক্যালরি চার্ট
শুধু ওজন নয় আরও বেশ কিছু বিষয়ের উপর দৈনিক প্রয়োজনীয় ক্যালরি নির্ভর করে। তাই শুধু ওজন অনুসারে ক্যালরি গ্রহণ করলে তা সঠিক হবেনা। সাধারণত মোটা স্বাস্থ্যের ব্যক্তিদের ক্যালরি গ্রহণ কমাতে হবে এবং খরচ বাড়াতে হবে। রোগা হালকা পাতলা স্বাস্থ্যের ব্যক্তিদের বেলায় এর উল্টো অর্থাৎ ক্যালরি গ্রহণ বাড়াতে হবে।
বিএমআই অনুযায়ী শরীরের ওজন ঠিক থাকলে বয়স অনুসারে প্রতিদিনের ক্যালরির চাহিদা
নিচের ছক থেকে জেনে নিন।
বয়স | দৈনিক ক্যালরির চাহিদা |
২-৪ বছর | ছেলে: ১০০০-১৬০০ ক্যালরি মেয়ে: ১০০০-১৪০০ ক্যালরি |
৫-৮ বছর | ছেলে: ১২০০-২০০০ ক্যালরি মেয়ে:১২০০-১৮০০ ক্যালরি |
৯-১৩ বছর | ছেলে: ১৬০০-২৬০০ ক্যালরি মেয়ে: ১৪০০-২২০০ ক্যালরি |
১৪-১৮ বছর | ছেলে: ২০০০-৩২০০ ক্যালরি মেয়ে: ১৮০০-২৪০০ ক্যালরি |
১৯-৩০ বছর | পুরুষ: ২৪০০-৩০০০ ক্যালরি মহিলা: ২০০০-২৪০০ ক্যালরি |
৩১-৫৯ বছর | পুরুষ: ২২০০-৩০০০ ক্যালরি মহিলা: ১৮০০-২২০০ ক্যালরি |
৬০ উর্ধ্বে | পুরুষ: ২০০০-২৬০০ ক্যালরি মহিলা: ১৬০০-২০০০ক্যালরি |
দৈনিক প্রয়োজনীয় ক্যালরি বের করার সবচেয়ে সহজ উপায়ে হলো, ইন্টারনেটে online calorie calculator লিখে সার্চ দিলে যে ক্যালরি ক্যালকুলেটর পাবেন তাতে বয়স, জেন্ডার, উচ্চতা, ওজন ও প্রতিদিনের অ্যাক্টিভিটি বসিয়ে ক্যালরি বের করা।
আমি মোঃ নুরুল ইসলাম। একজন সাধারণ ব্লগার। আপনাদের সঠিক ইনফরমেশন গুলো জানানো আমার মূল লক্ষ্য।