শাকসবজি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। আমাদের ভিটামিন, মিনারেল ও অন্যান্য পুষ্টি পেতে শাকসবজি খেতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে স্বাস্থ্য ভালো রাখার অনেক উপাদান থাকে এর মধ্যে। একজন গর্ভবতী মহিলার ও তার সন্তানের সুস্থতার জন্য শাকসবজি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভবতী মায়েদের খাবারের ব্যাপারে থাকে বেশকিছু বিধি নিষেধ। সন্তানের সুস্থতার জন্য নিয়ম মেনে চলতে হয়। চিকিৎসকরা এ সময়ে বেশি বেশি শাকসবজি খাওয়ার কথা বলে। তবে এই ব্যাপারে একটু সাবধান হওয়া জরুরী। কেননা কিছু সবজি খেতে নিষেধ গর্ভাবস্থায়।
অনেকেই জানতে চায়, গর্ভাবস্থায় কোন কোন সবজিগুলো খাওয়া যাবে না? পোস্টটিতে এই বিষয়ে জানানো হয়েছে। বিশেষ করে অঙ্কুরিত ছোলা, বেগুন, আদা গর্ভাবস্থায় না খাওয়া ভালো। তাছাড়া বাসি ও পঁচা খাবার একেবারে খেতে নিষেধ।
গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না
শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। গর্ভকালীন সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্য যেন গর্ভবতী মায়ের অস্বস্তির কারণ না হয় সেজন্য ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারগুলো প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। ফাইবার যুক্ত খাবারের মধ্যে শাকসবজি অন্যতম। আনন্দের বিষয় হচ্ছে, অল্প সংখ্যক সবজি গর্ভাবস্থায় বাদ দিতে হবে। অধিকাংশ খেতে পারবেন কোন সমস্যা হবে না।
অঙ্কুরিত ছোলা
অঙ্কুরিত ছোলা একটি পুষ্টিকর খাবার। প্রোটিন, ফাইবার, হেলদি ফ্যাট কি নেই এতে। তবে গর্ভাবস্থায় অঙ্কুরিত ছোলা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এত পুষ্টি থাকা সত্ত্বেও মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনা করে এই খাবার থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।
অঙ্কুরিত ছোলায় সালমোনেলা ও ই-কোলাই সহ আরো কিছু ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। সালমোনেলা গ্রুপের ব্যাকটেরিয়া গুলো টাইফয়েড, প্যারা টাইফয়েড ও ডায়রিয়া রোগ সৃষ্টি করে। আর বেশিরভাগ প্রস্রাবে ইনফেকশন হয় ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার কারণে।
আরও পড়ুন জরায়ু ইনফেকশন হলে করনীয় বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত।
ব্যাকটেরিয়া নানা ধরনের রোগ ব্যাধি ছড়ায়। সংক্রমণ জনিত রোগ প্রতিরোধে এসময়ে তাজা খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই গর্ভবতী মায়ের সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে অঙ্কুরিত ছোলা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
বেগুন
হয়তো আপনি বেগুন খেতে খুবই পছন্দ করেন। বেগুন পুষ্টিকর সবজি গুলোর মধ্যে একটি তা মানছি। গর্ভাবস্থায় বেগুন খাবেন না। বেগুনে রয়েছে ফাইটোহরমোন। এই হরমোন প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিন্ড্রোম ও অ্যামেনোরিয়ার সমস্যায় খুবই উপকারী। এসব ক্ষেত্রে বেগুন মূত্রবর্ধকের মত কাজ করে। গর্ভাবস্থায় বেগুন পিরিয়ড কে উদ্দীপিত করে অর্থাৎ পিরিয়ডের ঝুঁকি বাড়ায়, যা গর্ভবতী মায়েদের কাম্য নয়। এজন্য গর্ভাবস্থায় বেগুন খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
মিষ্টি আলু
মিষ্টি আলু ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ফাইবার দিয়ে বোঝাই করা থাকে। এগুলো গর্ভবতী মায়ের জন্য অতি প্রয়োজনীয় পুষ্টি। মিষ্টি আলু খেতে কোন নিষেধ নেই গর্ভবতী মায়েদের। তবে ভালোভাবে সেদ্ধ করে খেতে হবে। কাঁচা এবং অর্ধ সেদ্ধ মিষ্টি আলু খেলে পেটে গ্যাস সৃষ্টি হয়, বুকে জ্বালাপোড়া ও পেট ফেঁপে যেতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় মিষ্টি আলু খেতে চাইলে ভালোভাবে সেদ্ধ করে খেতে হবে।
আদা
আদার বহু ভেষজ গুণ রয়েছে। তবে এই সময়ে অতিরিক্ত আদা খাওয়া উচিত নয়। পরিমিত মাত্রায় খেতে পারেন। এসময়ে অতিরিক্ত আদা খেলে দেখা দিতে পারে কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা। গর্ভপাত বা পিরিয়ড হতে পারে অত্যাধিক আধা খাওয়ার কারণে। যা মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞরা প্রসবের সময় এগিয়ে আসলে আদা খেতে বারণ করে। আদা খেলে রক্ত পাতলা হয় ফলে প্রসব কালে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ে।
অন্যান্য খাবার ও শাকসবজি
গর্ভাবস্থায় সব ধরনের কাঁচা ও অর্ধ সেদ্ধ শাকসবজি, মাংস, মাছ ও মূল জাতীয় খাবার খাওয়ার বেশ কিছু খারাপ দিক রয়েছে। শাকসবজি, মাছ ও মাংস ভালোভাবে রান্না করে খাবেন। এতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি থাকবে না। সব সময় নিরাপদ পানি পান করতে হবে। অতিরিক্ত তেল চর্বি ও ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
এসময়ে গ্যাসের সমস্যা বেশি হয়। পেটে গ্যাস তৈরি করে এমন সব খাবার খাওয়া কমিয়ে দিন। বিশেষ করে অনেকের ক্রুসিফেরাস সবজি খেলে পেটে গ্যাস হয়। তাদের এই জাতীয় সবজিগুলো গর্ভাবস্থায় না খাওয়াই ভালো।
শেষ কথা: যদি সংক্ষিপ্ত করে বলি, গর্ভবতী মায়েরা কোন খাবার খেতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন আসে সেটা খাওয়া উচিত হবে কিনা। কারণ এই সময়টাতে সে তার গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্যের প্রতি বেশি লক্ষ্য রাখে।
তাই তাকে জানতে হয় কোন খাবারগুলো খেলে ভালো আর কোনগুলো বাদ দেয়া ভালো। এই আর্টিকেলটিতে কিছু সবজি সম্পর্কে জানানো হয়েছে যেগুলো গর্ভাবস্থায় খাওয়া উচিত নয়। আশা করি বিষয়টি আপনাদের ভালো ভাবে জানাতে পেরেছি।
আমি মোঃ নুরুল ইসলাম। একজন সাধারণ ব্লগার। আপনাদের সঠিক ইনফরমেশন গুলো জানানো আমার মূল লক্ষ্য।