মাসিক বন্ধ হওয়ার পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার সঠিক সময়।

গর্ভবতী হওয়া প্রতিটি মহিলার জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা। একজন মহিলা যদি গর্ভবতী হয় তাহলে তার কিছু শারীরিক পরিবর্তন হয়। যেমনঃ স্তন ফোলা ও কোমল ভাব,ঘন ঘন প্রস্রাব,মর্নিং সিকনেস,ক্লান্ত লাগা,মিসড প্রিয়ড ইত্যাদি।

এই লক্ষণ গুলির মধ্যে মিসড পিরিয়ড বা মাসিক মিস হলে অনেক মহিলারা মনে করে সে কনফার্ম গর্ভবতী। কিন্তু গর্ভবতী না হলেও অনেক সময় মিসড পিরিয়ড হতে পারে। অর্থাৎ যদিও মিসড পিরিয়ড গর্ভবতী হওয়ার একটি লক্ষণ, আপনি গর্ভবতী না হলেও অন্য কোন শারীরিক সমস্যার কারণে আপনার মিসড পিরিয়ড হতে পারে। এখন আপনার মনে স্বাভাবিক ভাবে এই প্রশ্নটা আসতেই পারে, আমি কি প্রেগন্যান্ট হয়েছি? আর তা বুঝব কিভাবে।

আপনি প্রেগন্যান্ট কি না তা নিশ্চিত ভাবে বোঝার জন্য আপনাকে অবশ্যই প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হবে। প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে কি লাগে,কিভাবে করতে হবে, ফলাফল কিভাবে বুঝবেন, কখন করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে সেটা আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়।

প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে কি লাগে

কোন মহিলা গর্ভবতী হলে তার শরীরে বিটাএইচসিজি নামক হরমোন তৈরি হয়। এই হরমোনের উপস্থিতি তার প্রস্রাবেও পাওয়া যায়। এই বিষয়টা স্পষ্ট যে, কোন গর্ভবতী মহিলার প্রস্রাবে বিটাএইচসিজি হরমোন এর উপস্থিতি থাকলে বোঝা যাবে তিনি গর্ভবতী হয়েছেন এবং না থাকলে বোঝা যাবে তিনি গর্ভবতী হননি।

মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়।

প্রস্রাবে বিটাএইচসিজি হরমোনের উপস্থিতি অর্থাৎ  প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার জন্য ফার্মেসীতে এক ধরনের ডিভাইস বা যন্ত্র পাওয়া যায়। এই ডিভাইসটিকে প্রেগন্যান্সি টেস্ট স্ট্রিপ বলে। এই স্ট্রিপের সাহায্যে খুব সহজেই প্রস্রাবে বিটাএইচসিজি হরমোন এর উপস্থিতি বুঝা যায়।

তাছাড়া আপনি কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রক্ত বা প্রস্রাব পরীক্ষার সাহায্যে বিটা এইচসিজি হরমোন এর উপস্থিতির মাধ্যমেও বুঝতে পারবেন আপনি প্রেগন্যান্ট কি না। যাইহোক, আপনি যদি ঘরে বসে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে চান তাহলে আপনার শুধু দরকার হবে একটি প্রেগন্যান্সি টেস্ট স্ট্রিপ ও সকালের প্রস্রাব। সকালের প্রস্রাবে ঘনত্ব বেশি হয় এবং বিটা এইচসিজি হরমোনের উপস্থিতিও বেশি থাকে যার ফলে প্রেগন্যান্সি টেস্ট ভালো হয়।

মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর pregnancy test করতে হয়?

নিয়মিতভাবে যে তারিখে মাসিক হওয়ার কথা সেটা পার হওয়ার কমপক্ষে এক সপ্তাহ পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হবে। অর্থাৎ মাসিক মিসড হওয়ার কমপক্ষে এক সপ্তাহ পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হবে।

আরও পড়ুন পিত্তথলির পাথর কেন হয়, লক্ষণ ও উপসর্গ এবং দূর করার উপায়।

প্রেগনেন্সি টেস্ট করার আগে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে অথবা মাসিকের তারিখ পার হওয়ার আগে টেস্ট করলে রিপোর্ট ভুল হতে পারে। তাই তড়িঘড়ি করা যাবেনা। পরীক্ষা করার আগে প্রেগন্যান্সি কিট এর মেয়াদ দেখে নিবেন। মেয়াদোত্তীর্ণ কিট দিয়ে পরীক্ষা করলে ভুল রিপোর্ট আসতে পারে।

প্রেগন্যান্সি টেস্ট এর রিপোর্ট যেভাবে বুঝবেন

স্ট্রিপে লেখা নির্দেশনা অনুযায়ী প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হবে। পরীক্ষা করার পর স্ট্রিপে লেখা সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। যদি স্ট্রিপে একটি রেখা আসে তাহলে প্রেগন্যান্সি নেগেটিভ অর্থাৎ আপনি গর্ভবতী নন। আর দুটি রেখা আসলে ফলাফল পজেটিভ অর্থাৎ আপনি গর্ভবতী। আর কোন রেখা না আসলে নতুন স্ট্রিপ দিয়ে একই নিয়মে পরীক্ষা করতে হবে।

আপনি বাড়িতে প্রেগন্যান্সি টেস্ট স্ট্রিপ দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করলে কতগুলো বিষয় মেনে চলতে হবে। 

  • আপনি যদি এইচসিজি হরমোন জাতীয় কোন ওষুধ সেবন করেন তাহলে আপনি গর্ভবতী না হলেও ফলাফল পজেটিভ আসতে পারে।
  • প্রেগন্যান্সি টেস্ট স্ট্রিপ মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে ফলাফল ভুল আসতে পারে। 
  • প্রস্রাবের নমুনা সংগ্রহ করার আগে পানি পান করলে বা কিছু খেলে।
  • মাসিকের সময় পার হওয়ার পর আরও সাত দিন না যেতেই পরীক্ষা করা।

প্রেগন্যান্সি টেস্ট সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন: জেনে নিন,ফলাফল নেগেটিভ কিন্তু মাসিক হচ্ছে না কেন?

উত্তর: যদি ফলাফল নেগেটিভ আসে কিন্তু মাসিক হয় না সেক্ষেত্রে এক সপ্তাহ পর আবার প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হবে। এবারেও যদি ফলাফল নেগেটিভ আসে তাহলে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। কেননা প্রেগন্যান্ট না হলেও অন্য কোনো কারনে মাসিক বন্ধ হতে পারে।

প্রশ্ন: ফলাফল ফলস নেগেটিভ আসে কেন?

উত্তর: আপনি প্রেগন্যান্ট কিন্তু ফলাফল নেগেটিভ আসতে পারে। এক্ষেত্রে মাসিক মিসড হওয়ার পর সাত দিন না যেতেই পরীক্ষা করলে এই সমস্যা হতে পারে।

আমাদের শেষ কথা– আপনি যদি নিয়ম মেনে পরীক্ষা করেন তাহলে প্রেগন্যান্সি টেস্ট স্ট্রিপ এর সাহায্যে পরীক্ষা করেই নিশ্চিত হতে পারবেন আপনি প্রেগন্যান্ট হয়েছেন কি না। আশা করি আমি বিষয়টা ভালো ভাবে বুঝাতে পেরেছি, ধন্যবাদ।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *