পিত্তথলিতে পাথর হলে বোঝা যাবে যে সব লক্ষণ দেখে।

বর্তমান সময়ে পিত্ত থলিতে পাথর রোগটি বেশ পরিচিত। দিন দিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। এই বিষয়ে জানার আগ্রহ রয়েছে অনেকের মধ্যে। বিশেষ করে একটা কৌতুহল সবার মাঝে কাজ করে, পাথর পিত্তথলিতে গেল কিভাবে। পরিষ্কার ধারণা পাবেন এই পোস্ট থেকে।

নারী ও পুরুষ উভয়ের পিত্তপাথুরী হতে পারে। তবে নারীদের ঝুঁকি বেশি। অনিয়মিত লাইফস্টাইল যার অন্যতম কারণ।বিশেষ করে পর্যাপ্ত পানি পান না করা, কনটাসেপটিভ পিল খাওয়া, মেনোপজের পর হরমোন নিঃসরণ কমে যাওয়া নারীদের পিত্ত থলিতে পাথরের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

রক্তে কোলেস্টেরল বা রক্ত চর্বি বেড়ে গেলেও এর ঝুঁকি বাড়ে। পিত্তথলির পাথরকে ডাক্তারি ভাষায় কলেলিথিয়াসিস বলে। পিত্তপাথুরী, কলেলিথিয়াসিস ও গলস্টোন একই রোগের ভিন্ন নাম।

পিত্তপাথুরী কি?

আমাদের দেহের ডান পেটের উপরিভাগে লিভারের ঠিক নিচে পিত্তথলি থাকে। লিভারে উৎপন্ন হয় হজমি রস বা পাচক রস যা আমাদের খাবার হজম করতে সাহায্য করে। এই পাচক রস পিত্তথলি সংগ্রহ করে জমা রাখে।

পিত্তথলির পাথর কেন হয়, লক্ষণ ও উপসর্গ এবং দূর করার উপায়।

পিত্তথলির এই পাচক রস আমাদের অনেকের কাছে পিত্ত রস নামেও পরিচিত। খাবার খাওয়ার পর পিত্ত রস পিত্ত নালীর ভেতর দিয়ে পেটের নাড়িতে এসে হজমে সহযোগিতা করে।

বেশিরভাগ পিত্তপাথুরী তৈরি হয় কোলেস্টেরল বা অন্যান্য পদার্থ দিয়ে। এ সকল পদার্থ শক্ত হয়ে পাথরে পরিণত হয়। পাথর হওয়ার পর প্রাথমিক দিকে কোন উপসর্গ থাকে না।

পিত্তথলি পাথরের লক্ষণ ও উপসর্গ

সাধারণত পেটের উপরিভাগে ডানপাশে বা মাঝখানে ব্যথা হয়। ভাজাপোড়া বা তেল চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়ার পর ব্যথা বাড়ে। তবে ব্যথা যে কোন সময় হতে পারে। ব্যথা কয়ে মিনিট থেকে ঘন্টা অবধি হয়।

ব্যথার সাথে অন্যান্য উপসর্গ থাকতে পারে। যেমন:

  • জ্বর
  • হার্টবিট বেড়ে যাওয়া
  • জন্ডিস (চামড়া ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়)
  • শরীরে চুলকানি হয়
  • ক্ষুধা কমে যায়, খেতে ইচ্ছে করে না

এই উপসর্গগুলি পিত্তপাথুরী ছাড়াও পিত্তথলিতে বা পিত্ত নালীতে ইনফেকশন এবং লিভার বা অগ্ন্যাশয়ে ইনফ্লামেশন হলে দেখা দিতে পারে। পিত্তথলিতে পাথর বা ইনফেকশনের কারণে যে ইনফ্লামেশন হয় তাকে কোলেসিসটাইটিস বলে। 

পিত্তথলির পাথর কেন হয়?

পিত্তের রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতাকে এই রোগের মূল কারণ হিসেবে ধরা হয়। রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতা ঠিক কি কারণে হয় এখন পর্যন্ত তা স্পষ্টভাবে জানা যায় নি।

কিছু সম্ভাব্য কারণের মধ্যে রয়েছে:

পিত্ত রসে অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের কারণে পাথর হতে পারে। পিত্তে খুব বেশি বিলিরুবিন থাকলে পিগমেন্ট পাথর হওয়ার ঝুঁকি থাকে। পিত্ত রসে বিলিরুবিন বেড়ে যাওয়ার কিছু কারণ রয়েছে। বিশেষ করে লিভারের রোগ, পিত্ত নালীতে ইনফেকশন এবং সিকেল সেল অ্যানিমিয়ায় ইত্যাদি। এসব রোগে পিত্ত রসে বিলিরুবিন খুব বেড়ে যায় ফলে পাথর বিকাশের ঝুঁকি থাকে।

আরও পড়ুন গর্ভাবস্থায় শেষ ৩ মাসের সতর্কতা ও খাবার তালিকা।

সাধারণত দেখা যায় গলস্টোন হয়েছে এমন রোগীদের মধ্যে মোটা স্বাস্থ্যের অধিকারী ও মহিলা রোগী সবচেয়ে বেশি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল মহিলাদের কোমরের সাইজ ৩৬ ইঞ্চি বা তার বেশি তাদের এই রোগের ঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

যাদের ঝুঁকি বেশি

যারা অনিয়মিত খাদ্যাভাসে অভ্যস্ত তাদের ঝুঁকি বেশি। ভালো স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার গড়ে তোলার মাধ্যমে খুব সহজেই ঝুঁকি কমানো যায়। কিছু ঝুঁকির কারণ রয়েছে যেগুলো নিয়ন্ত্রন করা যায় না।

যারা অনিয়মিত খাদ্যাভাসে অভ্যস্ত তাদের ঝুঁকি বেশি। ভালো স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার গড়ে তোলার মাধ্যমে খুব সহজেই ঝুঁকি কমানো যায়। কিছু ঝুঁকির কারণ রয়েছে যেগুলো নিয়ন্ত্রন করা যায় না।

অন্যান্য রিস্ক ফ্যাক্টর গুলো হল:

  • মোটা স্বাস্থ্য বা অতিরিক্ত শারীরিক ওজন।
  • চর্বি ও কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়া এবং আঁশ বা ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার কম খাওয়া।
  • টাইপ ২ ডায়াবেটিস থাকলে ঝুঁকি বেশি
  • দ্রুত ওজন কমাতে চাইলে পিত্ত পাথুরীর ঝুঁকি বাড়বে।
  • বংশগত কারণে সম্ভাবনা বেশি থাকে
  • লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তির
  • গর্ভাবস্থায়
  • উচ্চ ইস্ট্রোজেন যুক্ত ওষুধ সেবন
  • মহিলা ও ৬০ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের  পুরুষ বা মহিলা। 

পিত্তথলির পাথর চিকিৎসা বা নিরাময়ের উপায়

সার্জারি করে পাথর বের করা হয়। এই সার্জারিকে কোলেসিস্টেক্টমি বলা হয়। অস্ত্রোপচারের জটিলতার কারণে ঝুঁকিতে থাকলে ননসার্জিক্যাল উপায় বেছে নেয়া হয়। অস্ত্রোপচার না করা হলে পুনরায় পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই পাথর সার্জারি করে বের করা যদি না হয় রোগীকে বিশেষ সতর্ক থাকতে হয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পিত্তথলিতে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় না যদি কোন উপসর্গ মারাত্মকভাবে জ্বালাতন করে। এই সিদ্ধান্ত ডাক্তারদের, পেটে ব্যথা ও অন্যান্য লক্ষণ গুলো থাকলে ডাক্তার সার্জারি করার পরামর্শ দিতে পারে। পাথর অপসারণের সার্জারি বা কোলেসিস্টেক্টমি দুই ধরনের হয়। ল্যাপারোস্কোপিক কোলেসিস্টেক্টমি ও ওপেন কোলেসিস্টেক্টমি।

ল্যাপারোস্কোপিক কোলেসিস্টেক্টমি: পেট না কেটে পেটে তিন বা চারটি ছোট ছোট ছিদ্র করে ল্যাপারোস্কোপি যন্ত্রের সাহায্যে এই সার্জারি করা হয়। সাধারণত এই সার্জারির তেমন কোন জটিলতা নেই রোগী পরের দিন বাড়ি যেতে পারে।

ওপেন কোলেসিস্টেক্টমি: এখন আর এই পদ্ধতির তেমন দরকার পড়ে না। মাঝে মাঝে জটিলতর সমস্যায় ওপেন কোলেসিস্টেক্টমি করা হয়। ল্যাপারোস্কোপি করার সময় কোন সমস্যা দেখা দিলে পেট কেটে অস্ত্রোপচার করা হয়। পিত্তপাথুরী সংখ্যায় বেশি হলে, স্ফীত এবং ইনফেকশন থাকলে ওপেন কোলেসিস্টেক্টমি করার প্রয়োজন হতে পারে।

পিত্তথলির পাথর প্রতিরোধের উপায়

শরীরের ওজন বেশি হলে কমাতে হবে। তবে ওজন কমাতে হবে ধীরে ধীরে খুব দ্রুত নয়। ক্র্যাশ ডায়েটিং এবং দ্রুত ওজন কমানো এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায় বিশেষজ্ঞদের মতে এই রোগ প্রতিরোধে কম চর্বিযুক্ত খাবার, ফাইবারযুক্ত খাবার, ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া দরকার।

যারা মাংস ও আমিষ জাতীয় খাবার খায় তাদের গলস্টোন হওয়ার ঝুঁকি বেশি। মহিলাদের মেনোপজের সময় হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণেও হতে পারে। এ সময়ে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিলে ভালো।

শেষ কথা

গলব্লাডার বা পিত্তথলি কেটে ফেলার পর হজমে তেমন কোন সমস্যা হয় না।‌ শুধু তেল চর্বি জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। পিত্তথলির অপারেশনের পর তেল চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়ার কারণে অনেকের পেট ফাঁপা ও ডায়রিয়া হতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে ডাক্তারের নির্দেশ মেনে চললে সম্পূর্ণ সুস্থ থাকা যায়। এটি একটি সচেতনতা মূলক পোস্ট, পিত্তথলিতে পাথর আছে সন্দেহ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *