ওষুধ ছাড়া টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির কার্যকর উপায়।

নিরাপদ ও ঘরোয়া পদ্ধতিতে টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়ানোর উপায় সম্পর্কে আমরা জানবো। এই হরমোন মূলত পুরুষের হরমোন যা কমে গেলে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। নারীদের দেহে এই হরমোন পরিমিত মাত্রায় থাকে যা বৃদ্ধি পেলে শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। আমরা আজ জানবো পুরুষের এই হরমোন কমে গেলে কিভাবে বাড়ানো যায়।

টেস্টোস্টেরন এন্ড্রোজেন গ্রুপের একটি স্টেরয়েড হরমোন। মানুষ ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর শুক্রাশয়ে এটি উৎপন্ন হয়। এটি মূলত পুরুষের হরমোন যা পুরুষের শুক্রাশয়ের লিগিড কোষ থেকে উৎপন্ন হয়। তবে এই হরমোন অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিতে সামান্য পরিমাণে উৎপন্ন হয়। এই হরমোন পুরুষের পুরুষত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। একজন পুরুষের বয়:সন্ধিকালে যে পরিবর্তনগুলো শুরু হয় সেটা টেস্টোস্টেরন হরমোনের কার্যকারিতায় হয়ে থাকে।

পুরুষ হরমোনের কার্যকারিতা

টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির নিরাপদ ও কার্যকর উপায়

এই হরমোনের বিপাকের হার নারীদের তুলনায় পুরুষদের প্রায় ২০ গুণ বেশি হয়। মাংসপেশির গঠন, শরীরে লোম বৃদ্ধি, দাড়ি গোফ গজানো, শুক্রাশয় বৃদ্ধি, বয়:সন্ধিকালে কণ্ঠস্বরের পরিবর্তনসহ যেসব শারীরিক পরিবর্তন হয় সেটা এই পুরুষ হরমোনের প্রভাবে হয়ে থাকে।

টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায়

এই হরমোনের অভাবে দেহে নানারকম সমস্যা দেখা দেয়। তাই এই হরমোন বাড়াতে আমরা অনেকেই ওষুধ সেবন করে থাকি। ওষুধের বিকল্প হিসেবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে টেস্টোস্টেরন বাড়ানোর কতগুলো উপায় রয়েছে।

কোন ওষুধ সেবন ছাড়াই এই ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে খুব সহজেই বাড়ানো যায়। তাহলে আসুন জেনে নেই টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়ানোর এই ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে।

ব্যায়াম

নিয়মিত পরিমিত মাত্রায় ব্যায়াম লাইফস্টাইল সম্পর্কিত অনেক রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য। আশ্চর্যের বিষয়, গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে নিয়মিত ব্যায়াম দেহে টেস্টোস্টেরন বাড়াতেও সাহায্য করে। তাছাড়া এ কথা আমরা জানি যে ব্যায়াম দেহের ওজন ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

উচ্চতা ও বয়স অনুযায়ী দেহের ওজন কম বা বেশি হলে দেহে টেস্টোস্টেরন হরমোনের ঘাটতি পড়তে পারে। তাই আমাদের প্রতিদিন ব্যায়াম করার অভ্যাস করতে হবে। এতে শরীরের ওজন ঠিক থাকবে পাশাপাশি এই হরমোন ক্ষরণ বৃদ্ধি পাবে।

খাদ্য

খাদ্য সব ধরনের হরমোনের মাত্রার উপর প্রভাব ফেলে অর্থাৎ খাবারের সাথে হরমোনের সম্পর্ক রয়েছে। খাবার কম খাওয়া এবং অতিরিক্ত খাওয়ার দুটোই হরমোন এর উপর প্রভাব ফেলে। ডায়েট কন্ট্রোলের কারণে দীর্ঘদিন সুষম খাদ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে না খেলে অথবা অতিরিক্ত খেলে দেহের টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে যেতে পারে।

সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ও ফ্যাট কমাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে। অধিক ফ্যাট বা চর্বি দেহে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমায় অপরদিকে প্রোটিন ফ্যাট কমিয়ে এর মাত্রা বাড়ায়। তাই আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন খেতে হবে। তাছাড়া সব ধরনের চর্বি খারাপ নয়। ভালো চর্বি বা ফ্যাট দেহে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়াতে সহযোগিতা করে।

অতিরিক্ত পরিমাণে খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। মনে রাখবেন দীর্ঘদিন পর্যাপ্ত ক্যালরির অভাবে দেহে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে যায়। তাই প্রতিদিন পরিমাণমতো কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট ও প্রোটিন যুক্ত খাবার খেতে হবে। সামুদ্রিক মাছ, ডিম ও বাদামে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট বা চর্বি রয়েছে যা এই হরমোন বাড়াতে সাহায্য করে।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ

দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এই কথা আমরা অনেকেই জানি। মানসিক চাপের ফলে দেহের হরমোন কর্টিসলের মাত্রা বেড়ে যায়। হরমোন কর্টিসল বাড়লে টেস্টোস্টেরন কমে যায় এবং কর্টিসোল কমলে বেড়ে যায় অর্থাৎ দুটির একটি বাড়ালে অপরটি কমে।

কর্টিসোল বাড়লে শরীরের ওজন ও ফ্যাট বেড়ে যায়। অতিরিক্ত ওজন ও ফ্যাট টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমায়। সুস্থ থাকতে হলে দেহের ওজন ও ফ্যাট দুটোকেই‌ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আর এজন্য ডায়েটের পাশাপাশি মানসিক চাপ কমাতে হবে। আর মানসিক চাপ কমাতে পারলে এর মাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। নিয়মিত ব্যায়াম,সঠিক ডায়েট, পর্যাপ্ত ঘুম এবং একটি আদর্শ লাইফস্টাইল মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম গ্রহণ

ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ভিটামিন-ডি ন্যাচারাল টেস্টোস্টেরন হরমোন বুস্টার হিসেবে কাজ করে। এই ভিটামিন এর অভাবে দেহে এর উৎপাদন কমে যায়। একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রতিদিন 3000 IU ভিটামিন-ডি গ্রহণে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা 25 শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

আরো পড়ুন গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না তার তালিকা।

ভিটামিন ডি এর প্রধান প্রাকৃতিক উৎস হল সূর্য। সূর্যের আলো হতে আমরা আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি পেতে পারি। তাছাড়া ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার এবং সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ করা যায়। টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়াতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খেতে হবে, প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে।

আমরা জানি সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সব ধরনের ভিটামিন ও খনিজ লবণ শরীরে সঠিক মাত্রায় থাকা প্রয়োজন। ভিটামিন ডি এর মত জিঙ্ক টেস্টোস্টেরন হরমোন বুস্টার হিসেবে কাজ করে। তাই এই হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সব ধরনের ভিটামিন ও খনিজ লবণ এর উপর গুরুত্ব দিতে হবে।

পর্যাপ্ত ঘুম

ঘুমের অভাবে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে যায়। তাছাড়া পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই ব্যায়াম ও খাদ্যের পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকলে দেহে টেস্টোস্টেরন হরমোনের এর মাত্রা কমে যায়। এই হরমোনের মাত্রা সর্বোচ্চ পরিমাণে রাখতে প্রতিদিন কমপক্ষে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।

প্রাকৃতিক প্রতিকার

কিছু ভেষজ উদ্ভিদ রয়েছে যেগুলো টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়াতে সাহায্য করে। এদের মধ্যে অন্যতম হলো অশ্বগন্ধা। অশ্বগন্ধা টেস্টোস্টেরন বাড়ানোর পাশাপাশি কর্টিসোল কমায়। ফলে ওজন বৃদ্ধি ও শরীরে ফ্যাট জমার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।

অপর একটি ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ হল আদা। আদার নির্যাস টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়ায় বলে প্রমাণিত। এই দুটি ভেষজ উদ্ভিদ টেস্টোস্টেরন হরমোন বুস্টার হিসেবে কাজ করে। তাই এই হরমোন বৃদ্ধি করতে এই দুটি ভেষজ উদ্ভিদ ব্যবহার করা যেতে পারে।

মদ্যপান থেকে বিরত থাকা

মদ্যপান দেহে টেস্টোস্টেরন এর মাত্রা কমিয়ে দেয়। তাই মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে। একটি গবেষণায় জানা যায় যে তিন সপ্তাহ মদ্যপানের ফলে দেহে টেস্টোস্টেরন এর মাত্রা ৭ শতাংশ কমে যায়।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *