মুখের দুর্গন্ধ দূর করার ঔষধের নাম ও ঘরোয়া উপায়।
আবার অনেকের মুখে দুর্গন্ধ থাকলেও সে জানে না যে তার মুখে দুর্গন্ধ রয়েছে অর্থাৎ সে বুঝতে পারে না তার মুখে দুর্গন্ধ রয়েছে। যাইহোক মুখে দুর্গন্ধ একটি কমন স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও এটি হতে মুক্তি পেতে হলে আমাদের এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে। কারণ খুঁজে বের করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারলেই মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে। প্রয়োজন বোধে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
আপনি যদি মুখে দুর্গন্ধের কারণ, প্রতিকার, ওটিসি বা ওভার দ্যা কাউন্টার ওষুধ ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ে নিন। আশা করি আপনার উপকারে আসবে।
মুখের দুর্গন্ধকে ডাক্তারি ভাষায় হ্যালিটোসিস বলা হয়। সব সময় মুখ বন্ধ করে রাখা কষ্টের ব্যাপার। মুখে দুর্গন্ধ থাকলে মুখ খুললেই সামনে অথবা পাশে থাকা ব্যক্তি বাজে গন্ধের কারণে অস্বস্তি বোধ করে। বিষয়টা আসলেই লজ্জাজনক।
মুখের এই দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পাওয়ার নানা উপায় রয়েছে। আজ আমরা উপায় গুলো সম্পর্কে জানবো। তার আগে আমাদের জানতে হবে কেন মুখে দুর্গন্ধ হয়। আসুন মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণগুলো জেনে নেয়া যাক।
মুখে দুর্গন্ধের কারণ
মুখে দুর্গন্ধের সবচেয়ে কমন কারণ হলো মুখ ও দাঁতের বিভিন্ন রোগ। তবে শারীরিক অন্যান্য অসুস্থতার কারণেও মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। বিশেষ করে পেরিডেন্টাল ডিজিজ বা মাড়ির রোগের কারণে মুখে দুর্গন্ধ হয়।
দেখা যায় খাবার খাওয়ার পরে খাবারের কিছু অংশ বা ক্ষুদ্র কণা দাঁত বা মাড়িতে লেগে থাকে। যার কারনে দাঁতে শক্ত আবরণ তৈরি হয় যাকে ডেন্টাল প্লাক বলে। ডেন্টাল প্লাক বা মাড়ির রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে মাড়িতে প্রদাহ হয় এবং মাড়ি অথবা দাঁতে সামান্য আঘাতে মাড়ি থেকে রক্তপাত হয়। মাড়ির এই রোগকে বলা হয় জিনজিভাইটিস।
জিনজিভাইটিস দূর করতে যথাসময়ে ভালো চিকিৎসা করা উচিত। তা না হলে মাড়ি থেকে রক্তের সাথে পুঁজ বের হয়। একে বলা হয় পেরিওডন্টাইটিস। পেরিওডন্টাইটিস এর কারণে মুখে তীব্র বাজে দুর্গন্ধ হয়।
মুখের বিভিন্ন জায়গায় খাদ্য কণা লেগে থাকার ফলে মুখে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি বাড়ে ফলে মুখে দুর্গন্ধ হয়। পেঁয়াজ, রসুন ও মসলা জাতীয় খাবার খেলে মুখে দুর্গন্ধ হয়। তামাকজাত দ্রব্য সেবন মুখের দুর্গন্ধের একটি কারণ। তাছাড়া তামাকজাত দ্রব্য সেবনে মাড়ির রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
দাঁতের সঠিক যত্নের অভাবে মুখে দুর্গন্ধ হয়। প্রতিদিন অন্তত দুইবার দাঁত ব্রাশ করতে হবে। অর্থাৎ সকালে ঘুম থেকে উঠার পর এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দাঁত ব্রাশ করতে হবে।
সমস্যা হল আমাদের দুই দাঁতের মধ্যবর্তী স্থানে টুথপেস্ট পৌঁছায় না। তাই প্রতিদিন দুইবার ব্রাশ করলেও দুই দাঁতের মধ্যবর্তী স্থানে খাদ্য কনা ও ব্যাকটেরিয়া আটকে থাকে। যার ফলে মুখে দুর্গন্ধ হয়। এই সমস্যা দূর করতে নিয়মিত ফ্লস করতে হবে। ফ্লস করলে দুই দাঁতের মধ্যবর্তী স্থানের খাদ্য কনা সরে যায়, যার ফলে দাঁতে প্লাক জমে না এবং মুখে দুর্গন্ধ হয় না।
দাঁত ও মাড়ির পাশাপাশি জিহ্বা পরিষ্কার রাখতে হবে। জিহ্বা পরিস্কার না করলে এতে লেগে থাকা দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দুর্গন্ধ ছড়াবে। টাং স্ক্র্যাপার বা টাং ক্লিনার দিয়ে খুব সহজেই জিহ্বা পরিষ্কার করা যায়।
লালা মুখ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। ঘুমানোর সময় মুখে লালা কম থাকে। এই কারণেই ঘুম থেকে ওঠার পর নিঃশ্বাসের সাথে দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। আর মুখ খোলা রেখে ঘুমানোর অভ্যাস থাকলে দুর্গন্ধ আরো বেশি হয়। লালা গ্রন্থিতে সমস্যা এবং কোন রোগের কারণে মুখ দীর্ঘসময় শুষ্ক থাকলে মুখে দুর্গন্ধ হয়।
মুখের ভেতরের কোন অংশে ইনফেকশন হলে মুখে দুর্গন্ধ হয়। সাইনোসাইটিস, টনসিলাইটিস এবং গলাতে ইনফেকশন হলেও নিঃশ্বাসের সাথে দুর্গন্ধ থাকতে পারে। বদহজম, গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) ও পেটের কিছু রোগের কারণে মুখে দুর্গন্ধ হয়।
আরো পড়ুন
মুখের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায়
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মুখের দুর্গন্ধ হয় দাঁত ও মাড়ির রোগের কারণে। তাই আমাদের দাঁতের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। কিছু ঘরোয়া উপায়ে দূর করা যাবে মুখের দুর্গন্ধ। জেনে নেয়া যাক মুখের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো।
দইঃ দই একটি প্রোবায়োটিক খাবার। দইতে রয়েছে ল্যাকটোব্যাসিলাস নামের স্বাস্থ্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়া পেটের বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে। বদহজম, গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ ইত্যাদি পেটের রোগের কারণে যাদের মুখে দুর্গন্ধ হয় সেক্ষেত্রে দই খেলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে।
তাছাড়া দইতে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে। এক কথায়,দইতে থাকা প্রোবায়োটিক মুখের তীব্র দুর্গন্ধ কমাতে সাহায্য করে।
দুধঃ পেঁয়াজ, রসুন ও অন্যান্য মসলা জাতীয় খাবার খেলে মুখে যে দুর্গন্ধ হয় তা দূর করতে দুধ অত্যন্ত কার্যকর। তাই কোন খাবার খেলে যদি মুখে দুর্গন্ধ হয় তা দূর করতে এক গ্লাস দুধ খাওয়া যেতে পারে।
মৌরি বীজঃ মৌরি বীজ দেখতে অনেকটা জিরার বীজের মত। এই সুস্বাদু মসলা মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে। মৌরি বীজে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দূর করে, ফলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। মৌরি বীজ মুখে নিয়ে চিবালে লালার নিঃসরণ বাড়ে। আর এই কারণে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকতে পারে না।
ভিটামিন-সি ও লেবুঃ অনেকের মুখ শুকিয়ে যায় অর্থাৎ মুখে পর্যাপ্ত পরিমাণ লালা নিঃসরণ হয় না। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ভিটামিন-সি খেতে পারেন। কেননা ভিটামিন-সি মুখে লালা নিঃসরণ বাড়ায়। মুখে পর্যাপ্ত পরিমাণে লালা নিঃসৃত হলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে।
লেবুতে রয়েছে সাইট্রিক এসিড যা মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। তাই যাদের মুখে দুর্গন্ধ হয় লেবু ও অন্যান্য সাইট্রিক এসিডযুক্ত ফল খেতে পারেন।
গ্রিন টিঃ গ্রিন-টি এর রয়েছে অনেক গুণ। গ্রিন টি বা সবুজ চায়ের একটি ভালো বৈশিষ্ট্য হলো এটি জীবাণুনাশক। গ্রিন টি মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে। রাতে ঘুমানোর আগে দুই কাপ গ্রিন টি পান করলে নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ দূর হবে।
ঘরোয়া মাউথওয়াশ
মুখের তীব্র দুর্গন্ধ দূর করতে ঘরেই বানাতে পারেন মাউথ ওয়াশ। সোডিয়াম বাই কার্বনেট যা আমাদের অনেকের কাছে বেকিং সোডা হিসেবে পরিচিত। বেকিং সোডার রয়েছে জীবাণুনাশক বৈশিষ্ট্য। বেকিং সোডা দিয়ে মাউথওয়াশ বানিয়ে দাঁত,মাড়ি ও মুখের ভেতরের অংশ ৩০ সেকেন্ডের বেশি সময় নিয়ে পরিষ্কার করলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে।
আধা গ্লাস কুসুম গরম পানিতে আধা চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন। তৈরি হয়ে গেল বেকিং সোডা মাউথওয়াশ। দাঁত ব্রাশ করার পর অথবা যে কোন সময় ব্যবহার করতে পারেন এই বেকিং সোডা মাউথওয়াশ।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করার ওষুধের নাম
অনেকেই মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য ওষুধের নাম জানতে চান। সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে কেননা ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোন ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। তবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার কিছু ওভার দ্যা কাউন্টার ড্রাগ বা ওটিসি (OTC) ওষুধ রয়েছে যেগুলো ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াও ব্যবহার করা যায়। কিন্তু ওষুধ ব্যবহারের মাত্রা, নিয়ম, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে ফার্মেসিতে লিস্টাকেয়ার, ওরোক্লিন, ওরোস্টার কুলমিন্ট ইত্যাদি অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ পাবেন। অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ দিয়ে অন্তত ৩০ সেকেন্ড সময় নিয়ে কুলকুচি করতে হবে। কুলকুচি করার সময় মাউথওয়াশ যেন পেটের ভেতর না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বর্তমানে বেশিরভাগ টুথপেস্টে ফ্লোরাইড থাকে। ফ্লোরাইড দাঁতের ক্ষয় রোধ করে। মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে অবশ্যই দাঁত ও মাড়ি পরিষ্কার রাখতে হবে। ডায়াবেটিক কেটো-অ্যাসিডোসিস, কিডনি ফেইলিওর, কিডনিতে সংক্রমণ ইত্যাদি রোগের কারণেও মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। তাই ঘরোয়া উপায়ে ভালো ফল পাওয়া না গেলে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আমাদের শেষ কথা- এই নিবন্ধের মূল বিষয়বস্ত হল মুখের দুর্গন্ধ দূর করার ঔষধের নাম এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায়। আশা করি বিষয় দুইটি আপনাদের ভালোভাবে জানাতে পেরেছি। এই পোস্ট সম্পর্কে আপনাদের কোন মতামত থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন, ধন্যবাদ।