বেশি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা।

আমাদের শারীরিক বৃদ্ধি, বিকাশ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন, দেহে শক্তি উৎপাদনের জন্য পুষ্টির প্রয়োজন। প্রোটিন হলো এমন একটি পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শারীরিক অনেক ক্রিয়াকলাপের সাথে সম্পর্কিত। আমাদের শরীর অসংখ্য কোষকলা দিয়ে গঠিত যাদের টিস্যু বলা ঊ। এই টিস্যু গুলোকে রক্ষনাবেক্ষণ ও মেরামত করতে প্রোটিনের প্রয়োজন। আরো সহজ ভাবে যদি বলি, প্রোটিন দেহের বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ করে।

শুধু তাই না, শরীরে শক্তি উৎপাদনে প্রয়োজন কার্বোহাইড্রেট নামের আরেকটি পুষ্টির। শরীরে কার্বহাইড্রেটের ঘাটতি দেখা দিলে প্রোটিন নিজেই শক্তি উৎপাদন শুরু করে দেহকে সচল রাখে।

বেশি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার এর তালিকা।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ও রক্তচাপ কমাতেও এই পুষ্টি উপাদানটির ভালো অবদান রয়েছে। তাই দেহে এর চাহিদা মেটাতে প্রোটিনযুক্ত খাবার গুলো বেশি বেশি খেতে হবে। প্রকৃতিতে প্রোটিনের দুটি উৎস রয়েছে। যার একটি হলো প্রানিভিত্তিক এবং অপরটি হলো উদ্ভিদভিত্তিক।

উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবারের তালিকা

প্রোটিনযুক্ত খাবার বলতে আমরা সাধারণত মাছ মাংস ও ডিমকে বুঝি। তবে বীজ ও ডাল জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে এই পুষ্টি উপাদান থাকে। যেমন: বাদাম, কাউন চাল, সিমের বিচি, কুমড়া দানা, মটরশুঁটি ইত্যাদি। যদি এই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়েন আশা করি এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

ডিম

পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবারগুলোর মধ্যে, ডিম অন্যতম একটি পুষ্টিকর খাবার। ডিমে রয়েছে প্রোটিন,ভিটামিন, মিনারেল ও হেলদি ফ্যাট (স্বাস্থ্যকর চর্বি)।

শুধু কি তাই, ডিমে রয়েছে ত্বক ও চোখের সুরক্ষা এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় অ্যন্টি -অক্সিডেন্ট। প্রোটিন ডিমের প্রতিটি অংশেই পাওয়া যায়, তবে কুসুমের চেয়ে সাদা অংশে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকে। 

ডিমে কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালোরি খুব অল্প পরিমানে থাকে। তাই প্রতিদিন ডিম খেলে শরীর প্রোটিন পাবে কিন্তু ওজন বাড়ার কোনো দুশ্চিন্তা থাকবেনা। তবে যাদের ডিম খেলে অ্যালার্জি হয় তাদের ডিম না খাওয়াই ভালো। 

ডিমে প্রোটিনের পরিমাণ: একটি বড় আকারের ডিমে ৬ গ্রাম প্রোটিন ও ৭৪ ক্যালোরি থাকে।

বাদাম

বাদাম হলো শক্তির একটি ভান্ডার। মাত্র এক মুঠো বাদাম আপনাকে দিতে পারে প্রচুর এনার্জি। চিনা বাদাম, কাঠবাদাম, কাজু বাদাম সহ সব ধরনের বাদামে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। এমনকি পিনাট বাটারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রোটিন থাকে।

প্রোটিন ছাড়া বাদামে আরো থাকে ফাইবার, ভিটামিন-ই, ম্যাঙ্গানিজ এবং ম্যাগনেসিয়াম সহ আরো অনেক পুষ্টি উপাদান। 

বাদামে প্রোটিনের পরিমাণ: ১০০ গ্রাম বাদামে প্রায় ২২ গ্রাম প্রোটিন থাকে।

মুরগির স্তন

মুরগির স্তন একটি সুস্বাদু প্রোটিন যুক্ত খাবার। 

একটি মুরগির শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় বুকের মাংসে খুব অল্প পরিমানে চর্বি থাকে। তাই যারা ওজন কমাতে চান তারা মুরগির স্তন খেতে পারেন, এতে শরীর প্রোটিন পাবে কিন্তু ওজন বাড়বে না।

প্রোটিনের পরিমাণ- চামড়া ছাড়া একটি মুরগির স্তনে ৫৩ গ্রাম প্রোটিন এবং ২৮৪ ক্যালরি থাকে।

কুটির পনির

কুটির পনির হল এক ধরনের পনির, যাতে রয়েছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস,সেলেনিয়াম, ভিটামিন বি-12, ভিটামিন বি-2 ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। 

আর সবচেয়ে সুবিধা হল কুটির পনিরে চর্বি ও ক্যালরি খুব কম থাকে। যারা শরীরের ওজন নিয়ে চিন্তিত তারা নিঃসন্দেহে কুটির পনির খেতে পারেন। 

প্রোটিনের পরিমাণ- এক কাপ বা ২২৬ গ্রাম কুটির পনিরে ২৪ গ্রাম প্রোটিন ও ১৬৩ ক্যালরি থাকে।

গ্রিক দই

গ্রিক দই হল খুব ঘন ও ক্রিমযুক্ত এক ধরনের পুষ্টিকর দই। নাম গ্রিক দই হলেও এটি আমাদের দেশে পাওয়া যায় এমনকি বাড়িতেও বানানো যায়।

আরও পড়ুন গর্ভাবস্থায় কতবার ও কোন সময়ে আল্ট্রাসনোগ্রাম করা উচিত।

প্রোটিনের দিক বিবেচনা করলে সাধারণ দই থেকে গ্রিক দই এগিয়ে। গ্রিক দইয়ে সাধারণ দই থেকে প্রায় তিনগুন বেশি প্রোটিন থাকে। চিনিতে খুব বেশি পরিমানে ক্যালরি থাকে তাই গ্রিক দইয়ে চিনি দেয়া যাবে না। 

প্রোটিনের পরিমান: ১৭০ গ্রাম গ্রিক দইয়ে প্রায় ১৭ গ্রাম প্রোটিন ও ১০০ ক্যালরি থাকে।

দুধ

দুধে প্রায় সব ধরনের ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। প্রোটিন ছাড়া দুধে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে থাকা অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন বি 2।

যাদের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা আছে অর্থাৎ দুধ পানে পেটে না না সমস্যা হয় যেমনঃ পেট ব্যথা, বদহজম, পেট ফাঁপা ইত্যাদি, তাদের দুধ না পান করাই ভালো।

আবার কারো কারো দুধ পানে অ্যালার্জি হয়, তাদেরও দুধ না পান করাই ভালো। 

প্রোটিনের পরিমান: এক কাপ গরুর দুধে প্রায় ৪ গ্রাম প্রোটিন ও ১৪৯ ক্যালরি থাকে।

ব্রকলি

ব্রকলি একটি স্বাস্থ্যকর সবজি যাতে প্রোটিন, ভিটামিন সি,ভিটামিন কে,ফাইবার ও পটাসিয়াম রয়েছে। 

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল ব্রকলি ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। 

প্রোটিনের পরিমান: এক কাপ বা ৯৬ গ্রাম কাটা ব্রকলিতে ৩ গ্রাম প্রোটিন ও ৩১ ক্যালরি রয়েছে। 

বুঝতেই তো পারছেন যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য এই সবজিটি একটি পারফেক্ট খাবার।

চর্বিযুক্ত গরুর মাংস

চর্বিযুক্ত গরুর মাংসে যথেষ্ট পরিমানে প্রোটিন রয়েছে। সেই সাথে আরো রয়েছে অন্যান্য জৈবপদার্থ ও ভিটামিন যেমন- আয়রন ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি-১২ সহ আরো অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। 

প্রোটিনের পরিমান: ৮৫ গ্রাম চর্বিযুক্ত গরুর মাংসে ২৫ গ্রাম প্রোটিন ও ১৮৬ ক্যালরি রয়েছে।

যাদের ওজন কম বা শরীর দেখতে হালকা-পাতলা অর্থাৎ যারা ওজন বাড়াতে চান তাদের জন্য চর্বিযুক্ত গরুর মাংস একটি উপযুক্ত খাবার।

মসুর ডাল

উদ্ভিদ ভিত্তিক প্রোটিনের যে সেরা উৎস গুলি রয়েছে মসুর ডাল হল তাদের মধ্যে একটি। এতে প্রোটিন ছাড়া আরো রয়েছে ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম,পটাসিয়াম, আয়রন,কপার ও ম্যাঙ্গানিজ সহ আরো অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। 

প্রোটিনের পরিমান: এক কাপ বা ১৯৮ গ্রাম সিদ্ধ মসুর ডালে ১৮ গ্রাম প্রোটিন ও ২৩০ ক্যালরি থাকে।

মাছ (সব ধরনের)

মাছ বাঙালিদের প্রোটিন বা আমিষের একটি প্রধান উৎস। মাছে রয়েছে আমিষ, মাছ ছাড়া তরকারির হয় নিরামিষ। প্রোটিন ছাড়া মাছে রয়েছে আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড, যা বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

প্রোটিনের পরিমান: বিভিন্ন ধরনের মাছে প্রোটিনের পরিমান ভিন্ন ভিন্ন হয়।

চিংড়ি

আমাদের দেশের নদীগুলো থেকে মিঠাপানির চিংড়ি ও বঙ্গোপসাগর থেকে লোনা পানির চিংড়ি পাওয়া যায়। অন্যান্য মাছের মতো চিংড়িতেও রয়েছে প্রোটিন ও ওমেগা- 3 ফ্যাটি অ্যাসিড।

চিংড়ি মাছে ক্যালরির পরিমাণ খুব সামান্য হয় তবে সেলেনিয়াম ও ভিটামিন-বি 12 সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যথেষ্ট পরিমানে রয়েছে। 

প্রোটিনের পরিমান: ৮৫ গ্রাম একটি চিংড়িতে ২০ গ্রাম প্রোটিন ও ৮৪ ক্যালরি থাকে।

চিনা বাদাম

চিনা বাদামে অন্যান্য বাদাম থেকে প্রোটিন ও ফাইবার বেশি থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে চিনা বাদাম ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই যারা ওজন কমাতে চান চিনা বাদাম খেতে পারেন। ওজন কমার পাশাপাশি  দেহের পুষ্টির চাহিদা পূরন হবে। 

প্রোটিনের পরিমান: ২৮ গ্রাম চিনা বাদামে ৭ গ্রাম ফাইবার ও ১৬১ ক্যালরি থাকে।

শেষ কথা

প্রোটিন দেহের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। প্রোটিনের ঘাটতিতে আমাদের প্রোটিন যুক্ত খাবার গুলো বেশি পরিমাণে খেতে হবে। আমাদের এ দেশে বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রনিভিত্তিক প্রোটিন যুক্ত খাবার রয়েছে, যেগুলো আমাদের দেহের প্রোটিনের চাহিদা পূরনে যথেষ্ট। 

মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ব্রকলি, বাদাম ও লেগুম অর্থাৎ সিমের বিচি, মটরশুটি, মসুর ডাল ইত্যাদি প্রোটিনের সবচেয়ে ভালো উৎস। তাই আমি এই নিবন্ধে সেরা ১২টি প্রোটিন জাতীয় খাবার ও তাদের মধ্যে প্রোটিনের পরিমাণ সম্পর্কে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি নিয়মিত এই খাদ্য গুলো খেলে আমাদের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হবে।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *