যৌনাঙ্গ ও তার আশপাশে চুলকানি ও ফুসকুড়ি হলে নিতে হবে যে সকল পদক্ষেপ।

যোনিতে ফুসকুড়ি ঘরোয়া উপায়ে দূর করা সম্ভব। বিশেষ করে বেকিং সোডা, নারকেল তেল, টক দই, প্রোবায়োটিক ও অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম যোনির ফুসকুড়ি থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। কিন্তু যোনিতে ইনফেকশন থাকলে ভিন্ন বিষয়। ঘরোয়া চিকিৎসায় যোনির ফুসকুড়ি দূর করা সম্ভব হলেও ইনফেকশন হলে ডাক্তার দেখাতে হবে।

আসলে চুলকানি, ফুসকুড়ি ও ত্বকে জ্বালাপোড়া কোন রোগ নয়। এগুলো হলো অন্য রোগের উপসর্গ। মূল রোগ নির্ণয় করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে এই উপসর্গ গুলো দূর হয়ে যায়।

অনেক সময় চুলকানোর কারণে নখের আঘাতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত স্থানে ফুসকুড়ি থাকতে পারে। আপনি যদি এই পোস্ট মনোযোগ সহকারে পরেন তাহলে যৌনাঙ্গে ফুসকুড়ি দূর করার উপায় সম্পর্কে জানতে পারবেন।

যোনিতে ফুসকুড়ি হয় কেন?

যোনিতে ফুসকুড়ি কারণ খুঁজে বের করতে পারলে প্রতিকার করা সহজ হবে। প্রথমে জানতে হবে সম্ভাব্য কারণগুলো।

যোনিতে ফুসকুড়ি হলে করণীয়।

ছত্রাক সংক্রমণ: নারীদের যোনিপথে ক্যানডিডা আলবিক্যান্স নামের ছত্রাকের সংক্রমণের কারণে চুলকানি ও ফুসকুড়ি হতে পারে। এই স্থানে সাবান বা স্প্রে ব্যবহার এবং হরমোনের পরিবর্তনের ফলে ছত্রাক সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে। যোনিতে ছত্রাক সংক্রমণ হলে চুলকানি, ফুসকুড়ি ও জ্বালাপোড়া ছাড়াও সাদা স্রাব হয়।

ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস: যোনিতে চুলকানি ও ফুসকুড়ি হওয়ার আরো একটি কারণ হলো ব্যাকটেরিয়া ভ্যাজাইনোসিস। স্বাভাবিক অবস্থায় সেখানে ভালো ও খারাপ ব্যাকটেরিয়ার একটা ভারসাম্য বজায় থাকে। খারাপ ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পেলে ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস হয়।

অনিরাপদ যৌন মিলনে এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া এবং মাছের আঁশটে গন্ধের মতো সাদা, ধূসর বা সবুজ রঙের যোনিস্রাব ব্যাকটেরিয়া ভ্যাজাইনোসিস এর সাধারণ লক্ষণ।

ইস্ট্রোজেন হরমোনের ঘাটতি: ইস্ট্রোজেন হরমোনের ঘাটতি হলে যোনিপথ শুষ্ক হয়ে যায়। যোনিপথের শুষ্কতা চুলকানির একটি কারন। সাথে দেখা দিতে পারে ফুসকুড়ি। এই সমস্যা সাধারণত কম বয়সী মেয়েদের ও মেনোপজের পর মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। নারীদের যৌনাঙ্গের শুষ্কতা দূর হলে অনেক সময় চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়ার যায়।

প্রসাধনী ব্যবহার: যৌনাঙ্গে সুগন্ধি প্রসাধনী যেমন: সাবান, স্প্রে, ট্যালকম পাউডার ইত্যাদি এবং প্যাড ব্যবহারের কারণে ফুসকুড়ি, চুলকানি ও জ্বালাপোড়া হয়। নিরাপদ ও জীবাণুমুক্ত পানি দিয়ে যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করতে হবে। সুগন্ধি প্রসাধনী ব্যবহারের কারণে যোনিতে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া হলে এগুলো এড়িয়ে চলুন। প্যাড ব্যবহারে যদি চুলকানি হয় পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে প্যাড এর পরিবর্তে মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করুন।

যৌনবাহিত সংক্রামক রোগ: ক্ল্যামাইডিয়া, গনোরিয়া, জেনিটাল হার্পিস, ট্রাইকোমোনিয়াসিস ইত্যাদি যৌনবাহিত রোগ গোপনাঙ্গে চুলকানি সৃষ্টি করে। অনেক যৌনবাহিত সংক্রমণ রোগে যোনিতে ফুসকুড়ি ও ক্ষত দেখা দেয়।

চর্মরোগ: যৌনাঙ্গে চর্মরোগ হলে চুলকানি হয়। গোপনাঙ্গ ও তার আশপাশে ড্রাই স্কিন, স্ক্যাবিস, একজিমা, ডার্মাটাইটিস ও সোরিয়াসিস সবচেয়ে বেশি হয়। এক্ষেত্রে চুলকানি ও ফুসকুড়ি দূর করতে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

যোনিতে ফুসকুড়ি হলে ঘরোয়া উপায়

যোনিপথে ছত্রাক সংক্রমণ তেমন কোন জটিল সমস্যা নয়। তবে অবহেলা করা যাবে না। ক্যানডিডা আলবিক্যান্স এর কারণে দীর্ঘমেয়াদি চুলকানি, সাদা স্রাব, জ্বালাপোড়া ইত্যাদি উপসর্গ থাকতে পারে। সময় মত চিকিৎসায় এই সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আসুন ভ্যাজাইনাল ইচিং এর ঘরোয়া প্রতিকার গুলো জেনে নেয়া যাক।

আরো পড়ুন কোন ফলে কতটুকু ক্যালরি থাকে এর তালিকা

টক দই: যোনিতে ফুসকুড়ির একটি কার্যকরী ঘরোয়া প্রতিকার হল টক দই ব্যবহার করা।‌ টক দইয়ে থাকে অসংখ্য উপকারি ব্যাকটেরিয়া। আক্রান্ত স্থানে টক দই আধা ঘন্টা ব্যাপী লাগিয়ে রাখুন। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। দইয়ের সাথে কিছুটা মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। মধুতে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা জ্বালাপোড়া কমায়। মূলত টক দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনের বিরুদ্ধে কাজ করে।

বেকিং সোডা: অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য যুক্ত বেকিং সোডা ক্যানডিডা আলবিক্যান্স ছত্রাকের বিস্তার রোধ করে। তাছাড়া বেকিং সোডা সোরিয়াসিস এর অস্বস্তি চুলকানি থেকে স্বস্তি দেয়। ১ বালতি কুসুম গরম পানিতে ১/৪ কাপ বেকিং সোডা মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করলে চুলকানি দূর হবে।

আপেল সিডার ভিনেগার: আপেল সিডার ভিনেগারে অ্যান্টিফাঙ্গাল গুন রয়েছে। তাই এটি ব্যবহারে ছত্রাকের সংক্রমণ কমে যাবে। এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে দুই টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন দুই বার করে কিছুদিন খেলে সংক্রমণ, ফুসকুড়ি ও চুলকানি কমে আসবে। দ্রুত সাড়া পেতে আক্রান্ত স্থানেও লাগাতে পারেন।

প্রোবায়োটিক খাবার: প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার খেলে অন্ত্র ও নারীদের যোনিপথে ভালো ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায়। ফলে যৌনাঙ্গে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটাতে পারে না। টক দই, কম্বুচা, বাটার মিল্ক, কেফির ইত্যাদি খাবার সংক্রমণ প্রতিরোধে কাজ করে। যোনির সংক্রমণ ও চুলকানি থেকে মুক্তির জন্য প্রোবায়োটিক খাবার গুলো খেতে হবে।

যোনিতে ফুসকুড়ি হলে প্রতিরোধের উপায়

গোপনাঙ্গের আশেপাশে ঘাম জমলে সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। আঁটসাঁট কাপড় ঘামে ভিজে গায়ের সাথে লেগে থাকে। ফলে সংক্রমণের সুযোগ সৃষ্টি হয়। বাতাস চলাচল করতে সুবিধা হয় এমন ঢিলে সুতি অন্তর্বাস পড়া উচিত। সহজে বায়ু চলাচল করবে এবং ঘাম হয় না। অন্তর্বাস গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে ভুলবেন না।

যৌনাঙ্গে ফুসকুড়ি ও চুলকানির একটি কারণ যৌনবাহিত সংক্রমণ রোগ। নিরাপদ শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায়। গোসলের পর ভেজা কাপড় যত দ্রুত সম্ভব পাল্টে ফেলুন। ভেজা কাপড়ে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। সুগন্ধিযুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

যোনিতে ফুসকুড়ি হলে ঔষধ

ওভার দ্যা কাউন্টার অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ওষুধ খেলে ও ক্রিম ব্যবহার করলে ছত্রাকের সংক্রমণ সেরে যায়। ওষুধ সেবনের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত ভ্যাজাইনাতে কোন ক্রিম ব্যবহার করা যাবে না, কেননা এই অংশের ত্বক খুব সংবেদনশীল। বিশেষ করে স্টেরয়েড জাতীয় চুলকানির ক্রিম ব্যবহারে জ্বালাপোড়া হতে পারে।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *