রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়। যক্ষ্মা রোগ হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। রোগ প্রতিরোধে ক্ষমতা যদি বাড়ানো যায় তাহলে দ্রুত সেরে ওঠা সম্ভব। তাই যক্ষ্মা রোগে পুষ্টিকর খাবারগুলো বেশি বেশি খেতে হবে।
এই রোগ ব্যাকটেরিয়া জনিত একটি সংক্রামক রোগ। এই ব্যাকটেরিয়া রোগীর ফুসফুসে আক্রমণ করে। তবে শরীরের যেকোন স্থানে এই রোগ হতে পারে।
এই রোগের পথ্য কি হবে অর্থাৎ কোন খাবারগুলো খেতে হয় আর কোনগুলো বাদ দিতে হয় এই বিষয়ে জানা গুরুত্বপূর্ণ। কিছু খাবার দ্রুত সুস্থ হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
বিশেষ করে যে খাবারগুলো খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে সেগুলো এই সময়ে খাওয়া যাবে না। যেমন: অ্যালকোহল, অত্যাধিক চিনিযুক্ত খাবার, অস্বাস্থ্যকর তেল চর্বি দিয়ে বানানো খাবার এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার টিবি রোগীদের খাওয়া উচিত নয়।
{tocify} $title={Table of Contents}
যক্ষ্মা রোগীর খাবার তালিকা
খাবার তালিকায় রাখতে হবে হেলদি ফ্যাট, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ সব ধরনের খাবার। আর রাখা যাবেনা প্রসেস ফুড ও অস্বাস্থ্যকর সব ধরনের খাবার। টিবি রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
১.প্রোটিন
টিবি রোগে আক্রান্ত হলে শরীরের ওজন দ্রুত কমতে থাকে। কারন তার কোষগুলো দ্রুত ড্যামেজ হতে থাকে। এ সময়ে তাকে প্রচুর প্রোটিন যুক্ত খাবার খেতে হবে যেন সেল ডিভিশন ঠিক থাকে।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে weight gain হয় অর্থাৎ শরীরের ওজন বাড়ে। এছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রোটিন যুক্ত খাবার খেতে হয়। রোগীকে প্রতিদিন ডিম, মুরগির মাংস, ছোলা, বাদাম, মাছ, মটরশুটি, মসুর ডাল ইত্যাদি উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারগুলো খেতে হবে।
২.ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স
সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে দেহের জন্য প্রয়োজন বি-কমপ্লেক্স। সবুজ শাকসবজি, গোটা শস্য, বাদাম, বীজ জাতীয় খাবার, শিম, দুগ্ধজাত খাবার, মাংস, মাছ এবং মুরগিতে বি-কমপ্লেক্স ভিটামিন প্রচুর পরিমাণে থাকে।
৩.উচ্চ ক্যালরির খাবার
টিবি রোগীকে হাই ক্যালরি খাবারগুলো খেতে বলা হয় যেন তার প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহে কোন ঘাটতি না হয়। ঘি, মাখন, ডিম, দুধ, খেজুর, কিসমিস সহ সব ধরনের শুকনো ফলে প্রচুর ক্যালরি থাকে। দ্রুত সুস্থ হতে এসময়ে ক্যালরির যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
৪.জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার
জিঙ্ক আমাদের জন্য দরকারি মিনারেল বা খনিজ উপাদান সরবরাহ করে। শরীরের বৃদ্ধি, বিকাশ, ক্ষত নিরাময় এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে জিঙ্ক প্রয়োজন। তাই রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে রোগীকে বেশি বেশি জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
সামুদ্রিক মাছ, গরুর মাংস, মুরগির মাংস, বাদাম, মটরশুটি, গোটা শস্য, দুগ্ধজাত পণ্য ও মাশরুম জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার গুলোর মধ্যে অন্যতম।
৫.শাকসবজি
যক্ষ্মা রোগীদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিতকরণ ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা খাদ্য তালিকার মূখ্য বিষয়। তাই বিভিন্ন রঙের শাকসবজি খাদ্য তালিকায় রাখাটা বাধ্যতামূলক। কেননা শাকসবজি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও মিনারেল দিয়ে ভরপুর থাকে।
পালং শাকের মত গাঢ় সবুজ শাকসবজিতে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, আয়রন এবং ক্যালসিয়াম উচ্চ মাত্রায় থাকে। গাজর, মিষ্টি আলু এবং বেল মরিচে বিটাক্যারোটিন, বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার থাকে।
শাকসবজি খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি হজম শক্তি বাড়বে। দ্রুত সুস্থ হতে শাকসবজি একটি গুরুত্বপূর্ণ ডায়েট।
৬.শক্তিবর্ধক খাবার
বমি বমি ভাব, খাওয়ার অরুচি ও ওজন কমে যাওয়ার ফলে পেশেন্ট দুর্বল ও ক্লান্ত বোধ করে। এসময়ে খেতে হবে এমন খাবার যা অল্প পরিমাণে খেলে বেশি শক্তি পাওয়া যায়। তাই স্যুপের মতো শক্তিবর্ধক খাবার রোগ নিরাময়ে প্রয়োজন।
৭.শর্করা জাতীয় খাবার
বাদামি চাল, লাল আটা এবং গোটা শস্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে শর্করা থাকে। এজাতীয় খাবারে ফাইবার বা আঁশ থাকে যা টিবি রোগীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজন।
আঁশ সমৃদ্ধ খাবার খেলে হজম শক্তি বাড়ে ও কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে না। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার পাশাপাশি হজম শক্তি কমে যায় এই রোগে। তাই উচ্চ আঁশ জাতীয় খাবারগুলো বেশি বেশি খাওয়া প্রয়োজন।
খেতে নিষেধ যে খাবারগুলো
বেশ কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এই খাবারগুলো রোগীর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাতে পারে। আর স্বাস্থ্যের অবনতি হলে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
চর্বিযুক্ত মাংস: টিবি রোগীদের যত কম ফ্যাট খাবার খাওয়া যায় ততই ভালো। উচ্চ চর্বিযুক্ত মাংস বিশেষ করে লাল মাংস খাবেন না। ফ্যাট হজম করতে বেশ সমস্যা হয় যে কারনে রোগের উপসর্গ গুলো বাড়তে পারে।
প্রক্রিয়াজাত খাবার: প্রক্রিয়াজাত খাবারে অস্বাস্থ্যকর তেল, চর্বি, চিনি, কৃত্রিম রং ও অন্যান্য ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদান দিয়ে বানানো হয়। ফাস্টফুড, ক্যান করা খাবার, প্যাকেটজাত খাবার ও সব ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। এগুলো সবসময় স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাই কখনো খাওয়া উচিত নয়।
চিনিযুক্ত পানীয়: স্পোর্টস ড্রিংকস ও এনার্জি ড্রিংকসে চুমুক দেয়া একদম নিষেধ। এগুলোতে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে যে কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়।
ভাজা পোড়া খাবার: সিঙ্গারা, সমুচা, মোগলাই, পুরি, আলুর চপ ইত্যাদি ভাজাপোড়া খাবারে ট্রান্সফ্যাট থাকে। এই অস্বাস্থ্যকর চর্বি টিবি রোগীরদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
শেষ কথা
সংক্ষিপ্তভাবে যদি বলি, এই সংক্রামক রোগটির প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্তকরণ ও চিকিৎসার উপর নিরাময় নির্ভর করে। পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার, ভালো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও যথাযথভাবে নিয়ম মেনে ওষুধের কোর্স কমপ্লিট করার মধ্য দিয়ে প্রতিরোধ ও প্রতিকার পাওয়া যায়।
আশা করি বিষয়টি আপনাদের ভালোভাবে জানতে পেরেছি।
আরও পড়ুন ইসিজি রিপোর্ট বোঝার উপায়।