আল্ট্রাসনোগ্রাম শব্দটির সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের তার গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাম যেন একটি অতি পরিচিত মেডিকেল চেকআপ।
এই পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় গর্ভের সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে। এই পরীক্ষাটির সাহায্যে আরো কিছু রোগ নির্ণয় করা যায়। যেমন: পিত্তথলিতে পাথর বা টিউমার, ফ্যাটি লিভার ডিজিজ, মূত্রথলিতে বা মূত্রনালীতে অথবা কিডনিতে পাথর, জরায়ুতে টিউমার বা পাথর ইত্যাদি।
গর্ভবতী মায়ের গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে সেটা নিয়ে পরিবারের ও আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে থাকে কৌতূহল। গর্ভের সন্তানের জেন্ডার জানার নানা ধরনের মেডিকেল চেকআপ রয়েছে।
আল্ট্রাসাউন্ড হলো সবচেয়ে পরিচিত একটি মেডিকেল চেকআপ যার সাহায্যে গর্ভের সন্তানের জেন্ডার বোঝা যায়। এই পরীক্ষাটি করার পর রিপোর্ট দেখে বের করা যায় গর্ভের সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে।
{tocify} $title={Table of Contents}
আল্ট্রাসনোগ্রাম কি
আল্ট্রাসনোগ্রাম হলো একটি মেডিকেল চেকআপ যা উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে শরীরের ভিতর থেকে বিভিন্ন অঙ্গের বা টিস্যুর ছবি নেয়া যায়। অন্যান্য ইমেজিং টেকনিক থেকে এটি ভিন্ন প্রকৃতির। দেহের ভিতরে স্ক্যানিং করার জন্য উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। কোন ক্ষতিকর বিকিরণ না থাকায় গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসাউন্ড চেকআপ করলে মায়ের ও গর্ভের সন্তানের কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
আল্ট্রাসনোগ্রামকে আল্ট্রাসাউন্ড বা আল্ট্রাসনোগ্রাফি বলা হয়।
গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসনোগ্রাম করার নিয়ম
চিকিৎসকরা সাধারণত গর্ভাবস্থায় তিনবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করার পরামর্শ দিয়ে থাকে।
প্রথম আল্ট্রাসাউন্ড পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার ৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে করা উচিত। এই সময়টাতে আল্ট্রাসনোগ্রাম করা অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টাতে আল্ট্রাসাউন্ড করে ভ্রুণের সংখ্যা, প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ ও গর্ভপাতের আশঙ্কা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
তাছাড়া ভ্রুণ জরায়ুর বাইরে স্থাপিত হয়েছে কিনা সে সম্পর্কেও জানা যায়। ভ্রুণ জরায়ুর বাইরে স্থাপিত হলে অর্থাৎ গর্ভধারণ জরায়ুর বাইরে হলে সেটাকে এক্টোপিক প্রেগনেন্সি বলে। জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসা না করা হলে এক্ষেত্রে মায়ের মৃত্যু হতে পারে।
২য় আল্ট্রাসাউন্ড করার উপযুক্ত সময় হলো ১৮ থেকে ২২ সপ্তাহের মধ্যে। এই সময়ের মধ্যে ভ্রুণ পূর্ণ মানব শিশু রুপে পরিবর্তিত হয়। যদি গর্ভের শিশুর কোন জন্মগত অস্বাভাবিকতা বা জন্মগত ত্রুটি থাকে তাহলে এই সময়টাতে আল্ট্রাসাউন্ড করে তা জানা যাবে। গর্ভের সন্তানের জেন্ডার অর্থাৎ ছেলে নাকি মেয়ে বোঝা যাবে এই সময়ে।
বাচ্চার ওজন ঠিকমতো বাড়ছে কিনা এবং প্রসব সংক্রান্ত নানা জটিলতা সম্পর্কে ধারণা পেতে ৩৬-৩৮ সপ্তাহের মধ্যে আরও একবার আল্ট্রাসাউন্ড করা স্বাভাবিক নিয়মের মধ্যেই পড়ে।
পেটের শিশু বিষয়ে যা জানা যায়
- গর্ভাবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়
- ভ্রূণের হৃদস্পন্দন বিষয়ে জানা যায়
- একাধিক গর্ভধারণ বা জমজ সন্তানের সম্ভাবনা আছে কি না তা বোঝা যায়
- অ্যাক্টোপিক প্রেগন্যান্সি বা জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ সম্পর্কে জানা যায়
- শিশুর গর্ভকালীন বয়স ও প্রসবের প্রত্যাশিত তারিখ সম্পর্কে অনুমান করা যায়।
- ভ্রূণের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হলে সে সম্পর্কেও জানা যাবে।
- ভ্রূণের বৃদ্ধি এবং অবস্থান
- অ্যামনিওটিক তরলের মাত্রা বোঝা যায়
- শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ অর্থাৎ গর্ভের সন্তান ছেলে কি না মেয়ে বোঝা যায়
- ভ্রূণ পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাচ্ছে কিনা তা নির্ণয় করা যায়
- সার্ভিক্সের দৈর্ঘ্য পরিমাপ করা, অ্যামনিওটিক তরলের পরিমাণ জানা ও ভ্রূণের অবস্থান নির্ধারণ করা যায়
- জন্মগত অস্বাভাবিকতা বা জন্মগত ত্রুটি আছে কি না
- শিশুর গঠনগত অস্বাভাবিকতা বা রক্ত প্রবাহের সমস্যা থাকলে সে সম্পর্কেও জানা যাবে
- ডিম্বাশয় বা জরায়ুতে টিউমার, ইনফেকশন বা অন্য কোন সমস্যা আছে কি না নির্ণয় করা যায়
- প্লাসেন্টা প্রিভিয়া সম্পর্কে করে জানা যায়।
আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায়
রিপোর্ট দেখে ছেলে বোঝার উপায়
রিপোর্ট দেখে মেয়ে বোঝার উপায়
শারীরিক লক্ষণ দেখে জেন্ডার বোঝার উপায়
আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে জেন্ডার না বোঝার কারণ
- পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার পর থেকে ২২ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার পূর্বে অর্থাৎ গর্ভের বয়স ২২ সপ্তাহ হওয়ার আগে আল্ট্রাসাউন্ড করলে
- গর্ভবতী মায়ের পেটে যদি অতিরিক্ত চর্বি বা ফ্যাট থাকে
- যদি জরায়ুতে পর্যাপ্ত পরিমাণে এমনিওটিক ফ্লুইড না থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে গর্ভের সন্তানের জেন্ডার বোঝা যায় না
- বাচ্চার পজিশন ঠিক না থাকলে, দু পা চেপে রাখলে অথবা বাচ্চা উল্টো হয়ে থাকলে আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট থেকে বাচ্চার জেন্ডার বোঝা যায় না।