যোনিতে ফুসকুড়ি কেন হয় এবং যোনি ফুলে যায় কেন।

    যোনিতে ফুসকুড়ি কেন হয় বিষয়টা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের জানানো হয়েছে। বিষয়টা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কেননা বেশিরভাগ মহিলারা প্রাথমিক অবস্থায় বিষয়টা কারো কাছে জানাতে বিব্রত ও লজ্জা বোধ করেন। যোনিতে ফুসকুড়ি দেখা গেলে একজন চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে হবে।

    এই আর্টিকেলটি আপনাকে যোনিতে ফুসকুড়ি ও এর প্রতিকার জানতে সাহায্য করবে। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

    যোনিতে ফুসকুড়ি কেন হয়

    যোনিতে ফুসকুড়ি হওয়ার যে কারণগুলো রয়েছে সেগুলো জানতে পারলে রোগটিকে চিকিৎসা ও প্রতিরোধ করা অনেকটা সহজ হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কনটাক্ট ডার্মাটাইটিস,‌ ব্যাকটেরিয়াল,ভাইরাল, ফাঙ্গাল ও অন্যান্য জীবাণুর সংক্রমণের কারণে যোনিতে ফুসকুড়ি হয়। যোনিতে ফুসকুড়ির কারণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।

    যোনিতে ফুসকুড়ি কেন হয় এবং যোনি ফুলে যায় কেন।

    ভ্যাজিনাইটিস

    ভ্যাজিনাইটিস হলো যোনির প্রদাহ। ভ্যাজিনাইটিসের কারণে যোনিতে ফুসকুড়ি ও চুলকানি হয়। ভ্যাজিনাইটিসকে ভালভাবেভেজিনাইটিস বলা হয় যখন ভালভো পর্যন্ত জ্বালাপোড়া হয়। ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন বা ভ্যাজাইনেসিস, ইস্ট ইনফেকশন ও ট্রাইকোমনিয়াসিস এই তিন কারণে সবচেয়ে বেশি ভ্যাজিনাইটিস হয়।
    • ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনাইটিস বা ভ্যাজাইনেসিস: ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনাইটিস যোনিতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে হয়। 
    • ইস্ট ইনফেকশন: সাধারণত ক্যানডিডা অ্যালবিকেন নামের এক ধরনের ছত্রাকের সংক্রমণের কারণে হয়।
    • ট্রাইকোমনিয়াসিস: ট্রাইকোমোনাস ভ্যাজাইনালিস নামের এক ধরনের পরজীবীর সংক্রমণে এই রোগ হয়। এটি একটি যৌনবাহিত রোগ যা পুরুষেরও হতে পারে। তবে মহিলারা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। সহবাসের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যদি একজনের ট্রাইকোমনিয়াসিস হলে উভয়ের চিকিৎসা নিতে হবে।

    ভ্যাজিনাইটিসের লক্ষণ ও উপসর্গ

    • চুলকানি
    • প্রস্রাব ও সহবাসের সময় ব্যথা
    • ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনাইটিসে সাধারণত হলুদ বা ধূসর রঙের স্রাব হয় সাথে মাছের গায়ের গন্ধের মতো গন্ধ থাকে।
    • যোনিতে ইস্ট ইনফেকশন হলে অনেকটা দইয়ের মতো স্রাব হয়।
    • ট্রাইকোমোনিয়াসিসে তীব্র গন্ধযুক্ত সবুজ বা হলুদ স্রাব হতে পারে।

    চিকিৎসা: ইস্ট ইনফেকশনের ক্ষেত্রে অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন এর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পাশাপাশি অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ক্রিম ব্যবহার করতে হবে।

    ট্রাইকোমোনিয়াসিস এর চিকিৎসায় ওভার দা কাউন্টার ড্রাগ (ওটিসি) মেট্রোনিডাজল বা টিনিডাজল সেবন করতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ সেবন করা যাবে না।

    সোরিয়াসিস

    সোরিয়াসিস অটোইমিউন সিস্টেমের কারণে হয়। যোনিতে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানের ত্বকে এই রোগ হয়। সোরিয়াসিস সাধারণত যোনির ভেতরের অংশে হয় না। সোরিয়াসিসের কারণে আক্রান্ত স্থানে ক্ষত ও ফুসকুড়ি হয়।

     সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের এই সমস্যাটি বেশি হয়। কর্টিকোস্টেরয়েড ক্রিম বা অয়েন্টমেন্ট দিয়ে সোরিয়াসিস এর চিকিৎসা করা হয়।

    মলাস্কাম

    Molluscum contagiosum ভাইরাসের সংক্রমনে এই রোগ হয়। এটি একটি যৌনবাহিত রোগ। সহবাসের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। চুলকানি ও বাম্প এই রোগের সাধারণ লক্ষণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোন চিকিৎসা ছাড়াই রোগী সুস্থ হয়ে যায়। ইনফেকশন জটিল হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

    কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস

    যোনিতে চুলকানি ও ফুসকুড়ি সবচেয়ে বেশি হয় এই কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিসের কারণে। প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রায় ৫০ শতাংশ চুলকানির কারণ হলো কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস। ওভার দা কাউন্টার ড্রাগ (ওটিসি) চুলকানির ওষুধ হাইড্রোকর্টিসোন ক্রিম ব্যবহারে কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

    স্ক্যাবিস

    Sarcoptes scabei নামের এক ধরনের পরজীবীর কারণে এই রোগ হয়। যোনিতে স্ক্যাবিস হলে সহবাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। স্ক্যাবিস এর প্রধান লক্ষণ হল তীব্র চুলকানি ও গুটিগুটি ফুসকুড়ি। স্ক্যাবিসের চিকিৎসায় ডাক্তার নির্দেশিত ওষুধের পাশাপাশি ব্যবহারের কাপড়, তোয়ালে, বিছানার চাদর, বালিশের কাভার ইত্যাদি গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।

    জেনিটাল হারপিস

    herpes simplex ভাইরাসের কারণে জেনিটাল হারপিস হয়। ভাইরাস জনিত যৌনবাহিত রোগ গুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে কমন। একবার এই রোগে আক্রান্ত হলে দ্বিতীয় বার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পুরুষ ও মহিলা উভয় এই রোগে আক্রান্ত হয়। সংক্রমনের চার থেকে সাত দিন পরে লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে।

    লক্ষণ উপসর্গ: ছোট ছোট ফুসকুড়ি হয়। ফুসকুড়ি ফেটে গিয়ে ক্ষত হয়। ক্ষত যোনি, নিতম্ব ও মলদ্বারে চারপাশে ছড়িয়ে যেতে পারে। ক্ষত সাধারণত তিন থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

    কখনো কখনো ক্ষত থেকে পুঁজ বের হয়। ব্যথা, জ্বালাপোড়া, জ্বর ও মাথাব্যথা হতে পারে। জেনিটাল হারপিস এর কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই।

    শেষ কথা

    ফুসকুড়ি হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফুসকুড়ির স্থানে চুলকানি হয়। স্ক্র্যাচ করলে আক্রান্ত স্থানে ক্ষত তৈরি হতে পারে। আমরা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ইস্ট ও পরজীবীর মাধ্যমে যোনিতে সংক্রমন ঘটতে পারে।

    সহবাসের মাধ্যমে রোগ ছড়াতে পারে একজন থেকে অন্যজনে। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। অবহেলা নয় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
    Next Post Previous Post
    No Comment
    Add Comment
    comment url