জরায়ু স্ত্রী প্রজনন তন্ত্রের একটি সংবেদনশীল অঙ্গ। জরায়ুতে হতে পারে টিউমার। পিরিয়ডে সমস্যা, তলপেটে ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে আল্ট্রাসাউন্ড করার পর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জরায়ুতে টিউমার পাওয়া যায়। জরায়ু টিউমারকে ইউটেরিন ফাইব্রয়েড সংক্ষেপে ফাইব্রয়েড বলা হয়।
ফাইব্রয়েড একটি নন ক্যান্সার টিউমার। সাধারণত গর্ভধারণের সক্ষম বয়সে এই ধরনের টিউমার হয়। ৩০ বছরের উপরে বয়সী নারীদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ নারী এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফাইব্রয়েড হলে কোনো লক্ষণ থাকেনা। কারো ক্ষেত্রে মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত, পিঠে ব্যথা, তলপেটে ব্যথা, ঘন ঘন প্রস্রাব ও যৌনসঙ্গমের সময় ব্যথা হতে পারে।
ছোট আকারের এই ধরনের টিউমাররের ক্ষেত্রে কোন চিকিৎসার দরকার হয় না। আকারে বড় হলে ওষুধ বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।
জরায়ুর পেশির অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে এই টিউমার হয়। এই আর্টিকেলটিতে জরায়ু টিউমার সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।

জরায়ু টিউমারের লক্ষণ
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফাইব্রয়েড এর কোন লক্ষণ ও উপসর্গ থাকে না। বিশেষ করে টিউমাররের সাইজ যখন ছোট থাকে। এই অবস্থায় ডাক্তার শুধু নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে কোন চিকিৎসার দরকার হয় না। টিউমারের সাইজ বড় হলে কিছু লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা যেতে পারে।
- পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত ব্যথা ও রক্তপাত।
- তলপেটে ব্যথা ও ফুলে যাওয়া।
- টিউমার যদি মূত্রাশয়ে চাপ দেয় সেক্ষেত্রে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে।
- সহবাসের সময় ব্যথা।
- কোমর ব্যথা।
- দীর্ঘস্থায়ী ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ।
- পিরিয়ডের সময় দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
এই ধরনের এক বা একাধিক লক্ষণ দেখা গেলে অতি দ্রুত ডাক্তার দেখানো উচিত।
জরায়ু টিউমারের ঝুঁকি
জরায়ু টিউমারের ঝুঁকির বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। স্থূলতা বা অতিরিক্ত শরীরের ওজনের কারণে জরায়ু টিউমার হওয়ার ঝুঁকি দুই থেকে তিন গুণ বেড়ে যায়।
পারিবারিক ইতিহাস অর্থাৎ মায়ের জরায়ু টিউমার থাকলে মেয়ের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা একটি জেনেটিক কারণ।
যাদের দেরিতে মেনোপোজ হয়। বেশি ইস্ট্রোজেন হরমোনের কারণেও জরায়ু টিউমার হতে পারে।
জরায়ুর টিউমার কত প্রকার
টিউমার জরায়ুর ভেতরের অংশে, বাইরে দেয়ালে এবং যেখানে ভ্রুন থাকে সেখানেও হতে পারে। জরায়ু টিউমারের চিকিৎসার জন্য টিউমারের অবস্থান ও আকৃতি অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ। টিউমার জরায়ুর কোন স্থানে রয়েছে তার উপর ভিত্তি করে বলা যায় জরায়ু টিউমার তিন ধরনের।
সাবমিউকোসাল ফাইব্রয়েড: টিউমার যদি জরায়ু গহ্বর বা জরায়ুর ভেতরের অংশে হয় তাহলে তাকে সাবমিউকোসাল ফাইব্রয়েড বলা হয়। অর্থাৎ সাবমিউকোসাল ফাইব্রয়েড গর্ভাবস্থায় একটি শিশু যে স্থানে বড় হয় সেখানে হয়।
সাবসারোসাল ফাইব্রয়েড: টিউমার জরায়ুর বাইরের দেয়ালে হয়।
ইন্ট্রামুরাল ফাইব্রয়েড: টিউমার জরায়ুর দেয়ালের ভিতরের অংশ হয়।
জরায়ুর টিউমার দেখতে কেমন
জরায়ু টিউমার সাধারণত বৃত্তাকার হয়। অনেকটা গোল মাংসপিণ্ডের মত দেখায়। তবে সব টিউমার একই আকৃতির হয় না।
জরায়ু টিউমার থেকে ক্যান্সার
ফাইব্রয়েড ধরনের টিউমার থেকে সাধারণত ক্যান্সার হয় না। তবে ঝুঁকি নেওয়া একবারেই ঠিক হবে না। টিউমার দ্রুত বৃদ্ধি পেলে সময় নষ্ট না করে একজন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। তাছাড়া যেকোনো স্বাস্থ্য সমস্যায় একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
জরায়ু টিউমার কেন হয়
জরায়ুর পেশি অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ফলে এই টিউমার হয়। জরায়ুর পেশি কেন অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় তার কারন অজানা। অর্থাৎ জরায়ু টিউমারের কারণ এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
জরায়ু টিউমারের কারণে রক্তশূন্যতা
রক্তে লাল রক্তকণিকা কমে যাওয়ার কারণে রক্তশূন্যতা হয়। জরায়ু টিউমারের কারণে ঘন ঘন পিরিয়ড, পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত ও পিরিয়ডের সময় দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। শরীর থেকে এভাবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে হতে পারে রক্তশূন্যতা। রক্তশূন্যতার কারণে দুর্বল ও ক্লান্ত লাগা এবং অল্প পরিশ্রমে শ্বাসকষ্ট হওয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এজন্য অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
জরায়ু টিউমার নিয়ে পরিশেষ
আশা করি জরায়ু টিউমার সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আপনাদের জানাতে পেরেছি। অধিকাংশ রোগীরা নিজেরা বুঝতে পারে না যে তাদের জরায়ুতে টিউমার রয়েছে। টিউমারের সাইজ বড় হলে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে বিশেষ করে পিরিয়ডে সমস্যা।