শরীর মোটা করার উপায়- জেনে নিন কি খেলে মোটা হওয়া যায়।

    আপনি কি মোটা হওয়ার উপায় খুঁজছেন? তাহলে মনোযোগ সহকারে এই নিবন্ধটি পড়ে নিন। কেননা এই নিবন্ধটি আপনাকে শরীর মোটা করার উপায় গুলো জানতে সাহায্য করবে।

    অতিরিক্ত মোটা স্বাস্থ্য যেমন নানা রোগের ঝুঁকির কারণ ঠিক তেমনি খুব রোগা পাতলা হালকা স্বাস্থ্য অর্থাৎ আন্ডার ওয়েট কিছু রোগের কারণে হতে পারে। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখার পরেও যদি শরীরের ওজন কমতে থাকে সেক্ষেত্রে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

    শরীর মোটা করার উপায়- জেনে নিন কি খেলে মোটা হওয়া যায়।

    শরীরের ওজন বাড়াতে হলে সুস্বাস্থ্যের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর জীবন ধারায় চলতে হবে। সুস্বাস্থ্যের জন্য লাইফস্টাইল বা জীবনধারা কেমন হবে তা এই নিবন্ধে তুলে ধরা হয়েছে।
     
    আমাদের সব সময় স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। শরীর মোটা হওয়ার অনেক ঝুঁকিপূর্ণ উপায় রয়েছে যেগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই আমাদের ঝুঁকিমুক্ত উপায়ে মোটা হতে হবে।

    হালকা পাতলা স্বাস্থ্যের কারণে কিছু সমস্যা হতে পারে, যেমন: 
    • বয়স্ক হওয়ার সাথে সাথে পেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে
    • রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়
    • স্মৃতি শক্তি কমে যায়
    • অস্টিওপরোসিস এবং ফ্রাকচার হতে পারে।
    বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনেকেই জন্মগতভাবে রোগা স্বাস্থ্যের অধিকার হয়। অনেকের আবার বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে ওজন কমতে থাকে অর্থাৎ রোগা পাতলা হতে থাকে। যাকে আমরা স্বাস্থ্যহানি বলি।

    ওজন কমে যাওয়ার বা স্বাস্থ্যহানির অনেক কারন রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে এখানে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো সম্পর্কে আপনাদের জানানো হয়েছে।

    কিছু রোগ শরীরের ওজন কমানোর সাথে সম্পর্কযুক্ত। ওজন কমানোর সাথে সম্পর্কযুক্ত এই রোগ গুলো হলো:

    শরীরের ওজন কমতে থাকার একটি অন্যতম কারণ হলো ক্ষুধামান্দ্য। ক্ষুধামান্দ্য হওয়ার আবার কিছু কারণ রয়েছে। তার মধ্যে এনোরেক্সিয়া নার্ভোসা সবচেয়ে জটিল কারন।

    • এনোরেক্সিয়া নার্ভোসা একটি মারাত্মক মানসিক রোগ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তি খাবার ইচ্ছে কমে যায়, তাই শরীরে পর্যাপ্ত ক্যালরির অভাবে ওজন কমতে থাকে বা রোগীর স্বাস্থ্য হানি ঘটতে থাকে।
    • হাইপারথাইরয়েডিজম একটি হরমোনজনিত রোগ যা বিপাক বৃদ্ধি করে এবং ওজন কমাতে থাকে।
    • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না করা হলে তা ওজন কমাতে থাকে। বিশেষকরে টাইপ-১ ডায়াবেটিস মারত্বকভাবে ওজন কমানোর জন্য দায়ী।
    • ক্যান্সারযুক্ত টিউমার প্রচুর পরিমানে ক্যালরি নষ্ট করতে থাকে ফলস্বরূপ ওজন দ্রুত কমতে থাকে। 
    • কিছু কিছু সংক্রমণ রয়েছে যেগুলো ওজন কমাতে থাকে। যেমন- যক্ষা, নিউমোনিয়া, এইডস ইত্যাদি।

    আপনার যদি ওজন কমতে থাকে তাহলে একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে ওজন কমার কারণ জেনে নিন। 


    শরীর মোটা করার উপায়

    সঠিক উপায়ে শরীর মোটা করতে হলে প্রথমে আমাদেরকে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। অস্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়ানোর বিভিন্ন ঝুঁকি রয়েছে। যেমন: 
    • মেদভুঁড়ি
    • ফিটনেস নষ্ট হয়ে যাওয়া
    • ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া, ইত্যাদি।
    এতএব, স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

    সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।

    ১.ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়া

    ওজন বাড়াতে মোটা হওয়ার জন্য প্রচুর পরিমান ক্যালরিযুক্ত খাবার খেতে হবে। আমাদের শরীর যে পরিমান ক্যালরি বার্ন করে তার চেয়ে বেশি ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে।

    ধীরে ধীরে ওজন বাড়াতে হলে শরীর যে পরিমান ক্যালরি বার্ন করে তার চেয়ে ৩০০-৫০০ ক্যালরি গ্রহন করতে হবে,দ্রুত ওজন বাড়াতে চাইলে তা বাড়িয়ে ৭০০-১১,০০০ করতে হবে। অত্যাধিক ক্যালরি শরীরের জন্য ক্ষতিকর তাই পরামর্শ রইল ধীরে ধীরে শরীরের ওজন বৃদ্ধি করুন।

    ২.প্রচুর পরিমানে প্রোটিন যুক্ত খাবার গ্রহন

    প্রোটিন হল পেশীর বিল্ডিং ব্লক। স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান হল প্রোটিন। শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১.৫ থেকে ২.২ গ্রাম প্রোটিন খেতে হবে।

    প্রোটিন অতিরিক্ত ক্যালরিকে ফ্যাট হিসেবে জমতে বাধা দেয়। মাছ,ডিম,লেবু,বাদাম,দুগ্ধজাত পন্যে প্রচুর পরিমান প্রোটিন থাকে।

    ৩.কার্বোহাইড্রেট এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাটযুক্ত খাবার গ্রহণ

    প্রচুর পরিমানে কার্বোহাইড্রেট এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাটযুক্ত খাবার ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। ওজন বাড়াতে হলে ক্যালরি বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত ক্যালরি পেতে হলে দিনে কমপক্ষে তিনবার প্রচুর পরিমানে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাটযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে।

    ৪.খাবারে সস ও মসলা

    শরীর মোটা করতে হলে বেশি বেশি খেতে হবে। কিন্তু রুচির তো একটা ব্যাপার আছে। খাবারের প্রতি অনীহা আসতে পারে। তাই খাবারের সাথে রাখুন সুস্বাদু মসলা ও সস। খাবার মুখরোচক হবে এবং খাবারের প্রতি সহজে অনীহা আসবে না। যা ঘনঘন খাবার খেতে অনেকটা সাহায্য করবে।

    শরীর মোটা করার জন্য কিছু পরামর্শ

    আপনার জীবনধারা যেন শরীরের ওজন বৃদ্ধির বিপক্ষে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এখানে কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো যেগুলো শরীর মোটা করতে অনেকাংশে সাহায্য করে।

    খাওয়ার আগে পানি পান না করা । ক্যালরি যুক্ত খাবার খাওয়ার জন্য পেটে জায়গা রাখতে হবে। তাই খাওয়ার আগে পানি পান করার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।

    বেশি বার খাবার খেতে হবে। আপনি যখনই পারেন অতিরিক্ত খাবার বা জলখাবার খেয়ে নিন, যেমন ঘুমাতে যাওয়ার আগে।

    বেশি বেশি দুধ পান করতে হবে। কারন দুধে রয়েছে উচ্চমানের প্রোটিন এবং ক্যালোরি। যা মোটা হতে সাহায্য করে।

    প্রতিদিন নিয়মিত পরিমিত মাত্রায় ব্যায়াম শরীরের ওজন বাড়াবে। জিমে গিয়ে ট্রেইনারদের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যায়াম করলে শরীর সুগঠিত হবে। অর্থাৎ জিম করলে শরীর মোটা হয় কিন্তু শরীরের কোন ক্ষতিকর ফ্যাট থাকে না ফলে শরীর নানা রোগ থেকে সুস্থ থাকে।

    ধুমপানের অভ্যাস থাকলে ছেড়ে দিন। ধূমপান শরীরের জন্য সার্বিকভাবে ক্ষতিকর। ধুমপান ওজন কমানোর ঝুঁকিতে রাখে, তাই ধুমপান ছাড়তে হবে।

    মোটা হওয়ার খাদ্য তালিকা

    এখানে কয়েকটি খাদ্য সম্পর্কে আপনাদের জানানো হয়েছে যেগুলো শরীর মোটা করতে সাহায্য করে। এই খাবারগুলো নানা পুষ্টি গুণে ভরপুর। শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি ওজন বৃদ্ধি করে। এই জাতীয় খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে:

    বাদাম, আখরোট, ম্যাকডামিয়া বাদাম, চিনাবাদাম ইত্যাদি বাদাম। কিসমিস, খেজুর, ইত্যাদি শুকনো ফল। দুধ, ভালো মানের ফ্যাটযুক্ত দই, পনির, ক্রিম ইত্যাদি দুগ্ধজাত পণ্য।

    জলপাই তেল এবং অ্যাভোকাডো তেল ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যুক্ত তেল। ওট, বাদামী চাল ও বিভিন্ন শস্য জাতীয় খাবার। মুরগী, গো-মাংস, ছাগলের মাংস ইত্যাদি মাংস।

    আলু, মিষ্টি আলু, গাজর, ডার্ক চকোলেট, অ্যাভোকাডোস, চিনাবাদাম মাখন, নারকেলের দুধ, গ্রানোলা, ট্রেইল মিক্স ইত্যাদি।

    শরীর মোটা করার উপায় নিয়ে শেষ কথা

    আমাদের শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হতে হবে। আর এই জন্য প্রয়োজন একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সুষম খাদ্য খেতে হবে।

    অনেক শিশু রুগ্ন স্বাস্থ্য অর্থাৎ কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। অনেকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয় কিন্তু শরীরের ওজন ধীরে ধীরে কমতে থাকে। শরীরের ওজন কমার কারণ জানতে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। রোগ নির্ণয় ও সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্বাস্থ্যহানি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
    Next Post Previous Post
    No Comment
    Add Comment
    comment url