মাথা ঘোরানো এবং চোখে ঝাপসা দেখা আসলে কোন রোগ নয় কিন্তু অন্য রোগের উপসর্গ। উপসর্গ দুটি বিভিন্ন রোগের কারণে হতে পারে। কোন কোন সমস্যার কারণে মাথা ঘোরাতে পারে তা আমরা আজ জানতে পারবো। মাথা ঘোরানোর পাশাপাশি চোখে ঝাপসা দেখার কারন থাকছে এই নিবন্ধে।
মাথা ঘোরা কি তা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। অনেকেরই হয়তো এর অভিজ্ঞতা রয়েছে যাকে ডাক্তারি ভাষায় ভার্টিগো বলা হয়। ভার্টিগো হলে আমাদের চারপাশের সব কিছু ঘুরতে থাকার মিথ্যা অনুভূতি সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ সবকিছু যদিও স্থির থাকে রোগীর কাছে মনে হয় তার চারপাশের সবকিছু ঘুরছে।
রোগীর উচিত হলো ভয় না পেয়ে মাথা এর খুঁজে বের করা। ভার্টিগো বা মাথা ঘোরার সাথে বমি বমি ভাব বা বমি হলে শারীরিক অবস্থা আরো জটিল হতে পারে।
{tocify} $title={Table of Contents}
মাথা ঘোরায় যেসব রোগে
মাথা চক্কর কাটার নানা কারণ রয়েছে। এই সকল কারণকে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। পেরিফেরাল ভার্টিগো, সেন্ট্রাল ভার্টিগো ও অন্যান্য কারণে ভার্টিগো হওয়া।
কানের একবারে ভেতরের অংশের কোষ গুলো আমাদের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। এদের ভেস্টিবুলার নার্ভ বলা হয়। ভেস্টিবুলার নার্ভের সমস্যার কারণে ভার্টিগো হলে তাকে পেরিফেরাল ভার্টিগো বলে।
পেরিফেরাল ভার্টিগোতে মাথা ঘোরার সাথে সাথে কানে তালা লাগা, কম শোনা, শো শো শব্দ করা ইত্যাদি উপসর্গ থাকতে পারে।
সেন্ট্রাল ভার্টিগো মস্তিষ্কের বিভিন্ন সমস্যার কারণে হয়। যেমন: স্ট্রোক, ব্রেইন টিউমার, মাইগ্রেন, মস্তিষ্কের সংক্রমণ ইত্যাদি। সেন্ট্রাল ভার্টিগোতে মাথা চক্কর দেওয়ার সাথে আরও নানা উপসর্গ থাকতে পারে আর তা নির্ভর করবে মস্তিষ্কে কোন ধরনের সমস্যা হয়েছে তার ওপর।
মাথা ঘোরানোর অন্যান্য রোগের মধ্যে রয়েছে পোসচারাল হাইপোটেনশন। হঠাৎ করে রক্তচাপ কমে যাওয়াকে পোসচারাল হাইপোটেনশন বলে যে কারণে মাথা ঘুরতে পারে। এক্ষেত্রে রোগী শোয়া বা বসা থেকে উঠলে চোখে ঝাপসা দেখে এবং মাথা চক্কর দিতে থাকে। এই সমস্যাটা ডায়াবেটিস রোগীদের বেশি হয়।
অনেক সময় পাশ পরিবর্তন করলে অর্থাৎ এপাশ থেকে ওপাশ হলেই ভার্টিগো হয়। একে বিনাইন পজিশনাল ভার্টিগো বলে। তাছাড়া দুশ্চিন্তা,পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, ডিহাইড্রেশন, হাইপ্রেশার, রক্তশূন্যতা ও ডায়াবেটিস কমে যাওয়া বা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মাথা ঘোরতে পারে।
কমানোর উপায়
মাথা ঘোরা কিসের লক্ষণ বিষয়টা অনেকেই জানতে চান। আমরা জানতে পেরেছি মাথা ঘোরার অনেক কারণ রয়েছে। মাথা ঘোরালে ভয় না পেয়ে তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা ও ভয় সরাসরি মাথা ঘোরার সাথে সম্পর্কিত না হলেও সার্বিক পরিস্থিতিকে জটিল করে ফেলতে পারে। অত্যাধিক মানসিক চাপ স্ট্রোকের একটি কারণ।
মাথা ঘোরার ঘরোয়া প্রতিকার কিছুটা হলেও মাথা ঘোরা কমাতে সাহায্য করবে। ডিহাইড্রেশন এর কারণে মাথা ঘুরতে পারে তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। মাথা ঘোরার সাথে কানে কোন সমস্যা হলে বুঝতে হবে এটা পেরিফেরাল ভার্টিগো। মাথা ঘুরানোর সাথে মুখ বেঁকে যাওয়া, অস্পষ্টভাবে কথা বলা, শরীরের একপাশ অথবা কোন অঙ্গ অবশ লাগলে দ্রুত একজন ডাক্তার দেখানো উচিত। কারণ এটি সেন্ট্রাল ভার্টিগো হতে পারে।
রক্ত শূন্যতার কারণে ভার্টিগো হলে বেশি করে শাকসবজি ও আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। ব্লাড প্রেসার ও ডায়াবেটিস মেপে দেখতে হবে ঠিকঠাক আছে কিনা। ঘুমের অভাবে মাথা ঘোরাতে পারে তাই দরকার পর্যাপ্ত ঘুম।
মাথা চক্কর দিলে আপনার নিকটবর্তী কোন কিছু জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকুন। কেননা পড়ে গেলে ব্যথা পেতে পারেন। ভার্টিগো দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
গর্ভাবস্থায় ভার্টিগো
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে মাথা চক্কর দেওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এর কিছু কারণ রয়েছে। যেমন:
- হরমোনের মাত্রার ওঠানামা
- দীর্ঘ সময় বিছানায় শুয়ে থাকা
- ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম বিপাকের পরিবর্তন
- ব্লাড সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি ইত্যাদি।
শেষ কথা
আশা করি মাথা ঘোরানো বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো জানাতে পেরেছি। বিষয়টাকে হালকা করে দেখার কোন সুযোগ নেই। কারণ মস্তিষ্কের কোনো সমস্যার কারণে মাথা ঘুরলে শারীরিক পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হতে পারে। নিজ থেকে কোন সিদ্ধান্ত না নিয়ে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া জরুরি।