কৃমি হলে কি কি সমস্যা হয় ও কৃমি দূর করার ঘরোয়া উপায়।

    পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া সত্বেও আপনার শরীরের ওজন কমে যাচ্ছে? আপনার খাবার থেকে পুষ্টি কৃমি নিয়ে যাচ্ছে না তো। সতর্ক থাকতে হবে কেননা কৃমি শুধু শিশুদের হয় না। যেকোনো বয়সে হতে পারে কৃমির সংক্রমন।

    কৃমি মানব দেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। শোষণ করে নেয় খাবার থেকে পুষ্টি যার ফলে শরীরে দেখা দেয় নানা স্বাস্থ্য জটিলতা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব কৃমি সংক্রমনের প্রধান কারণ। সাধারণত শহর অঞ্চলের লোকজনের চেয়ে গ্রামে কৃমির সংক্রমনের পরিমাণ বেশি। এর কারণ হলো গ্রামের বেশিরভাগ লোকজন খালি পায়ে থাকে।

    কৃমি কি

    কৃমি হলে এক ধরনের পরজীবী যা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর দেহে বসবাস করে। কৃমি তার হোস্ট হতে পুষ্টি গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। মানব দেহ থেকে পুষ্টি শোষণ করার ফলে কৃমি সংক্রমিত ব্যক্তি অপুষ্টিতে ভোগে। আর এই অপুষ্টি জনিত কারণে শরীরে দেখা দেয় নানা ধরনের জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা। তাছাড়া কৃমি সংক্রমিত ব্যক্তির পেটের রোগ লেগেই থাকে। 

    কৃমির লক্ষণ ও উপসর্গ

    আমাদের দেশে কেঁচো কৃমি এবং পিনওয়ার্ম বা গুড়া কৃমির সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি হয়। পেটে কৃমি থাকলে দেখা দিতে পারে কিছু উপসর্গ। এই উপসর্গ গুলোর মধ্যে রয়েছে-
    • পেটে ব্যথা
    • ডায়রিয়া ও বমি বমি ভাব, বমিও হতে পারে
    • পেটে গ্যাস হয়, পেট ফুলে যায়
    • শরীর ক্লান্ত লাগে
    • শরীরের ওজন কমে যায়
    • গুড়া কৃমি হলে মলদ্বারে চুলকানি হয়
    কৃমিতে আক্রান্ত ব্যক্তির আমাশয় হতে পারে। অনেক সময় পায়খানার সাথে কৃমি বের হতে পারে। অনেকের পেটে কৃমি থাকলেও কোন উপসর্গ দেখা যায় না।
    কৃমি হলে কি কি সমস্যা হয় ও কৃমি দূর করার ঘরোয়া উপায়।

    কৃমি কেন হয়?

    সাধারণত কৃমি পোষক দেহের অন্ত্রে বসবাস করে। কৃমির ডিম্বাণু মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর পেটে প্রবেশ করার মাধ্যমে কৃমির সংক্রমণ হয়। অন্ত্র ছাড়াও দেহের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে কৃমির আক্রমণ হতে পারে। তাছাড়া কৃমির লার্ভা ত্বকের মাধ্যমেও দেহে প্রবেশ করতে পারে।

    বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দূষিত খাবারের মাধ্যমে কৃমির সংক্রমণ হয়। খাবারের সাথে কৃমির ডিম মানুষের অন্ত্রে পৌঁছানোর মাধ্যমে কৃমির সংক্রমণ হয়।
    শহর অঞ্চলের চেয়ে গ্রামে কৃমির বিস্তার ও উপদ্রব বেশি। কারণ গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব রয়েছে। গ্রামের মানুষজন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খালি পায়ে দূষিত মাটিতে হাঁটা চলা করে। অনেকের আবার ফলমূল ভালোভাবে না ধূয়ে খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। কাঁচা ফলমূলের সাথে কৃমির ডিম মানুষের পেটে ঢুকে কৃমির সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

    কৃমি দূর করার ঘরোয়া উপায়

    ঘরোয়া উপায়ে কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কিছু খাবারে কৃমিনাশক উপাদান রয়েছে। এই খাবারগুলো আমাদের কৃমি থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে। এখানে পাঁচটি খাবার সম্পর্কে জানানো হয়েছে যেগুলোতে কৃমিনাশক উপাদান রয়েছে। তাহলে জেনে নেয়া যাক পাঁচটি কৃমিনাশক খাবার সম্পর্কে।

    ১.রসুনঃ রসুনে রয়েছে উচ্চমাত্রায় সালফার যুক্ত অ্যামিনো অ্যাসিড। এই কারণেই রসুন একটি শক্তিশালী কৃমিনাশক। রসুনে আরো রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য।

    যাইহোক, রসুনে উচ্চমাত্রায় সালফারযুক্ত অ্যামিনো অ্যাসিডের কারণে এটি একটি শক্তিশালী কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে। রসুন খাওয়ার নানা উপায় রয়েছে।
    প্রতিদিন খালি পেটে ৩-৪ টি কাঁচা রসুনের কোয়া চিবিয়ে খেতে পারেন। ৭-১০ দিন পর্যন্ত এই নিয়মে রসুন খেলে কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তাছাড়া আধা কাপ দুধে ৩-৪ টি রসুনের কোয়া সিদ্ধ করে এক সপ্তাহ পর্যন্ত খেলে কৃমি দূর হবে।

    পায়ুপথে কৃমির চুলকানি দূর করতে কাঁচা রসুনের পেস্ট বানিয়ে ভেসলিন অথবা অন্যান্য পেট্রোলিয়াম জেলির সাথে মিশিয়ে পায়ুপথে লাগালে চুলকানি কমবে পাশাপাশি কৃমির ডিম নষ্ট হবে।

    ২.কাঁচা পেঁপেঃ কাঁচা পেপেতে রয়েছে প্যাপাইন নামক এক ধরনের এনজাইম। এই এনজাইম অ্যান্টি হেলমান্থেটিক হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া, পেঁপের বীজেও ক্যারিমিন নামক এক ধরনের উপাদান থাকে। এই ক্যারিমিন গুড়া কৃমির বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকর।
    এক কাপ পানিতে বা দুধে এক চা-চামচ পিষানো পেঁপের বীজ মেশাতে হবে। পরপর তিনদিন এভাবে মিশ্রণ বানিয়ে খালি পেটে খেতে হবে।

    ৩-৪ টেবিল চামচ পানি অথবা গরম দুধের সাথে ১ টেবিল চামচ কাঁচা পেঁপের রস ও ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন খালি পেটে পর পর তিন দিন খেলেও দূর হবে কৃমি।

    ৩.নারকেলঃ কৃমি বিশেষ করে গুড়া কৃমির ঘরোয়া চিকিৎসায় নারকেল অত্যন্ত কার্যকর। কেননা, নারকেলে রয়েছে কৃমিনাশক বৈশিষ্ট্য। ভালো ফলাফল পেতে প্রতিদিন সকালে দুই টেবিল চামচ কোরানো নারকেল খেতে পারেন।

    ৪.কুমড়ো বীজঃ কুমড়ো বীজে রয়েছে কিউকারবিটাসিন নামক এক ধরনের পদার্থ যা কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে। কুমড়ো বীজ ভেজে চূর্ণ করে নিতে হবে। ১ টেবিল চামচ এই চূর্ণ  কুমড়োর বীজের সাথে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খেলে মিলবে কৃমি থেকে মুক্তি।

    ৫. নিমঃ কৃমির ঘরোয়া চিকিৎসায় নিম বহু কাল থেকেই আমাদের দেশে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিম পেটের কৃমি ধ্বংস করতে অত্যন্ত কার্যকরী। নিমপাতা পিষে রস বের করে সরাসরি খাওয়া যায়। নিম পাতার রস খুব তেতো তাই কিছুটা মধু মিশিয়ে নিন।


    আমাদের শেষ কথাঃ আজকের এই আর্টিকেলটি মূলত কৃমি হলে কি কি সমস্যা হয় ও কৃমি দূর করার ঘরোয়া উপায় এই দুইটি বিষয়ের উপর লেখা হয়েছে। কোন উপায়ে কৃমির ডিম পেটে গেলে কৃমির সংক্রমণ হয়। তাই কৃমির সংক্রমণ প্রতিরোধে আমাদের হতে হবে স্বাস্থ্য সচেতন।

    খাওয়ার আগে ও পরে ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। মলত্যাগের পর সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস হবে। কাঁচা শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার আগে ভালোভাবে নিরাপদ পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। হাতের নখ সব সময় ছোট রাখতে হবে।

    কৃমির চিকিৎসায় নিতে হবে ডাক্তারের পরামর্শ। রসুন, কাঁচা পেঁপে, নারকেল,কুমড়ো বীজ ও নিম এই পাঁচটি খাবার হলো কার্যকর কৃমিনাশক। তাই এই খাবারগুলো খেলে কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
    Next Post Previous Post
    No Comment
    Add Comment
    comment url