জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়।

জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ কি কি? সুস্থ থাকতে হলে জানতে হবে। জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ, উপসর্গ এবং প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় এবং সময়মতো চিকিৎসা না করা হলে নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হয়।

জরায়ুর মুখ কে সারভিক্স বলা হয়। অর্থাৎ সারভিক্স হল জরায়ু ও যোনিপথের সংযোগ স্থল। এই অংশে ইনফ্লামেশন হলে তাকে সার্ভিসাইটিস বলা হয়। সার্ভিসাইটিস মহিলাদের একটি যন্ত্রণাদায়ক স্বাস্থ্য সমস্যা।

{tocify} $title={Table of Contents}

এন্ডোমেট্রাইটিস কি?

জরায়ুর ভিতরে যে আস্তরন থাকে তাকে এন্ডোমেট্রিয়াম বলে। এন্ডোমেট্রাইটিস হল জরায়ুর এই এন্ডোমেট্রিয়াম বা জরায়ুর ভেতরের আস্তরণের প্রদাহজনিত অবস্থা যা ইনফেকশনের কারণে হয়ে থাকে। অর্থাৎ এন্ডোমেট্রাইটিস হল জরায়ুর ইনফেকশন তাই আমরা জরায়ু ইনফেকশন বলতে এন্ডোমেট্রাইটিসকে বুঝব।

জরায়ু ইনফেকশন জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ কোনো রোগ নয়। তবে সময়মতো চিকিৎসা না করা হলে ইনফেকশন প্রজননতন্ত্রের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে যেতে পারে এতে নানা রকম জটিল সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
জরায়ু ইনফেকশন সনাক্ত করার জন্য এর লক্ষণ ও উপসর্গগুলো জানা প্রয়োজন।

চিকিৎসকরা যেকোনো ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনজনিত চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জরায়ু ইনফেকশন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ কারণে হয়ে থাকে। তাই জরায়ু ইনফেকশনের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের প্রয়োজন হয়। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোন অ্যান্টিবায়োটিক সেবন উচিত নয়।

আমরা এই আর্টিকেলে শুধু জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে আলোচনা করব। যা আপনাকে জরায়ু ইনফেকশন শনাক্তকরণের সাহায্য করবে।

জরায়ু ইনফেকশনের কারণ

বেশিরভাগ জরায়ু ইনফেকশন এর কারণ হলো এসটিআই অর্থাৎ যৌনবাহিত সংক্রমণ। যেমন- ক্ল্যামাইডিয়া, গনোরিয়া ইত্যাদি। তাছাড়া অন্যান্য জীবাণুর সংক্রমণের ফলে জরায়ু ইনফেকশন হতে পারে। এইসব ব্যাকটেরিয়া সাধারণত অরক্ষিত শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে বিস্তার ঘটায়। মাসিকের সময় এবং সন্তান প্রসব এবং গর্ভপাত কালে বা গর্ভপাতের পরে এই সংক্রমণ হতে পারে। তাছাড়া আইইউডি থেকে কখনো কখনো পিআইডি হতে পারে।

যাদের ঝুঁকি বেশি

সিজারিয়ান ডেলিভারির পর জরায়ু ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। গর্ভপাত ও প্রসবের পরেও জরায়ু ইনফেকশন হতে পারে। তাছাড়া পিরিয়ডের পর ও আইইউডি (IUD) স্থাপনের সময় জীবাণুর প্রবেশ এর কারণে জরায়ু ইনফেকশন হতে পারে।

জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়।

লক্ষণ ও উপসর্গ 

জরায়ু ইনফেকশন সাধারনত দুই ধরনের হয়ে থাকে। অ্যাকিউট বা তীব্র ও ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী জরায়ু ইনফেকশন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্রনিক জরায়ু ইনফেকশনে কোনো উপসর্গ থাকে না। যাইহোক জরায়ু ইনফেকশনের কমন লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- 
  • শরীরের জ্বর আসা অর্থাৎ জরায়ু ইনফেকশনের কারণে শরীরের জ্বর আসতে পারে।
  • তলপেটে ব্যথা হয় এবং ব্যথা মলদ্বার পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে।
  • অস্বাভাবিক পিরিওড অর্থাৎ মাসিকের পথে অস্বাভাবিক রক্তপাত।
  • ডিসচার্জ অর্থাৎ মাসিকের পথে অস্বাভাবিক স্রাব 
  • কোষ্ঠকাঠিন্য এবং তলপেট ফুলে যাওয়া।
এসব গুলোই হল জরায়ু ইনফেকশন এর কমন লক্ষণ। তবে রোগের ধরন ও প্রকৃতি ভালোভাবে শনাক্তকরণের জন্য ল্যাব টেস্ট এর প্রয়োজন হতে পারে। এই লক্ষণগুলো কারো মধ্যে পাওয়া গেলে একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

জটিলতা

রোগটিকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারের অবশ্যই আমাদের স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। জরায়ু ইনফেকশন হলে দ্রুত একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে হবে। চিকিৎসা না করা হলে রোগটি কিছু জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন- 
  • বন্ধ্যাত্ব
  • পেলভিক পেরিটোনাইটিস
  • সেপটিসেমিয়া অর্থাৎ রক্তে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে যেতে পারে
  • সেপটিক শক
সেপটিসেমিয়া ও সেপটিক শক এ দুটোই জটিল সমস্যা। এমনকি রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই এমন অবস্থায় রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতালে পাঠাতে হবে।

প্রতিরোধের উপায়

জরায়ু ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। সিজারিয়ান ডেলিভারি তে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি অবশ্যই জীবাণু মুক্ত হতে হবে। সিজারিয়ান ডেলিভারির পর এন্টিবায়োটিক ডাক্তার নির্দেশিত সময় পর্যন্ত সেবন করতে হবে।

আইইউডি পড়ার সময় চিকিৎসক অথবা স্বাস্থ্যকর্মীকে জিজ্ঞেস করতে হবে সেটা জীবাণুমুক্ত কিনা। এস টি আই প্রতিরোধেও সচেতন হতে হবে। এস টি আই তে আক্রান্ত হলে যথাসম্ভব দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।
N.Islam

আমি মোঃ নুরুল ইসলাম একজন সাধারণ ব্লগার। আমি পেশায় একজন কমিউনিটি প্যারামেডিক ও ফার্মাসিস্ট।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post